দুর্গম চরে মোটরসাইকেলে ঘুরছে ভাগ্যের চাকা
সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো
চর মাজারদিয়া। পদ্মা নদীর ঘাটে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রাকিব। ছোট একটি নৌকা ভিড়তেই শুরু হলো হাঁকডাক ‘যাবেন না-কি’। পেয়ে গেলেন দুই যাত্রী। ছুটলেন বালুর পথ ধরে ধুলো উড়িয়ে। কলেজে পড়ার পাশাপাশি মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন রাকিব। চলে নিজের পড়ার খরচও।
রাকিব বলেন, ‘বাবা দিনমজুর। মামার দেওয়া একটি মোটরসাইকেল আমি চালাই। এ মোটরসাইকেল দিয়ে কলেজের যাওয়া-আশার পাশাপাশি যাত্রী নেই। প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা আয় হয়। তবে তেল ও অন্য খরচ বাদ দিয়ে ৩০০-৪০০ টাকা থাকে। এ টাকা দিয়েই চলে পড়াশোনা আর হাতখরচ। পাশাপাশি চলে পরিবারের খরচও। ’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চর মাজারদিয়া রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। সেখানে যেতে হলে রাজশাহী শহরের পাশ দিয়েই বহমান পদ্মা নদী পার হতে হয়। নাব্য সংকটে বর্তমানে পদ্মা ছোট হয়ে নৌপথ কমেছে। জেগেছে চর। বেড়েছে পায়ে হাঁটা পথ।
পদ্মার দুর্গম চরে এক সময় বাহন হিসেবে চলতো শুধু গরু-মহিষের গাড়ি। তবে গেলো কয়েক বছর ধরে চরের মানুষের বাহনের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল।
শুধু রাকিব নন, তার মতো চরের অন্তত ৭০ যুবক ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। একবার এক যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে পারলেই পকেটে আসে ২০০ টাকা। চরের মানুষের কাছে এ টাকাও অনেক বেশি। তবে যাতায়াতের সুবিধার্থে যাত্রীরাও মেনে নিয়েছেন এ পরিবহন।
স্থানীয়রা জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও তারা এমন সংকীর্ণ পথে বাইক চালাতে পারেন। এখানে অবশ্য ট্রাফিক পুলিশ নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তাদের কেউ ধরে না। এখানকার চালকরা খুব দক্ষ।
চর মাজারদিয়া গ্রামের যুবক মো. কালাম দুই বছর ধরে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০০ ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। নদীপাড় থেকে গ্রামে এনে দিলে একজন আরোহী ১০০-১৫০ টাকা দেন। এ টাকা দিয়েই পরিবার চলে।’
মিঠু আরও বলেন, ‘গাড়ি চালাতে আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে রাস্তার। যেখানে ধুলা বেশি সেখানে গর্ত থাকে। আনেকে সেই গর্তে পড়ে যায়। উঁচুনিচু আর ধুলার করণে আমাদের চলতে সমস্যা হয়।’
আরেক বাইকচালক ভাষান বলেন, ‘এ চরে কৃষি ছাড়া তেমন কোনো কর্ম নেই। আগে কৃষি কাজ করতাম। এরপর টাকা জমিয়ে শো-রুম থেকে কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনেছিলাম। এক বছরের মধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছি। এখন প্রতিদিনই ৪০০ টাকা আয় হলেই আলহামদুলিল্লাহ। আর কিছু করা লাগে না। এ টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলছে।’
ভাষান আরও বলেন, ‘বছরে ছয়মাস নদী শুকিয়ে থাকে। সেসময় আমার বেশি ভাড়ায় গাড়ি চালেই। নদীতে পানি বেড়ে গেলে গ্রামে গ্রামে মোটরসাইকেল চালিয়ে আয় করি।’
স্থানীয়রা জানান, চরবাসীর মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো উপায় নেই। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামে ফেরা প্রায় অসম্ভব। তাই একটু বেশি টাকায় হলেও তারা মেনে নিয়েছেন এ পরিবহনকে।
পবার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিল দেশ সময় টিভি কে বলেন, চরে চলাচলের জন্য আগে কিছু ছিল না। মানুষ হেঁটে অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করতো। এখন যুবকদের ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। আগে দেখা যেতো না এখন চলাচল করছে জানান তিনি