তানোরে আগাম আলুতে বাম্পার লাভ, খুশি কৃষক
সোহেল রানা রাজশাহী
ব্যুরো
রাজশাহীর তানোরে আগাম জাতের আলুতে বাম্পার লাভ করছেন কৃষকরা। অবশ্য আগাম আলু পৌর সদর বিল কুমারি বিলের উচুঁ জমিতে চাষ হয়ে থাকে। তবে এর পরিমান খুবই অল্প। আগাম আলুতে ফলনও ভালো হচ্ছে এবং জমি থেকে পাইকাররা কিনে নিচ্ছেন। গত বার এসময়ে চাষে একই রকম খরচ হলেও প্রচুর লোকসান গুনতে হয়েছিল প্রান্তিক চাষীদের। কিন্তু এবারে তিনগুন বেশি দামে বিক্রি হয়েছে আলু। ফলে চাষীদের মুখে বইছে হাসির ঝিলিক। সেই সাথে লাভ হওয়ার কারনে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ বাড়াবে কৃষকদের বলেও মনে করছেন কৃষি দপ্তর।
পৌর এলাকার ধানতৈড় গ্রামের নিচে দক্ষিণ দিকে বোরো রোপনের আগে আগাম আলু চাষ হয়। এবারে ১ বিঘা ১০ কাঠা জমিতে আগাম আলু চাষ করে বিক্রি করেছেন মিজান। তিনি জানান, আগাম আলুর এত চাহিদা হবে কল্পনা করতে পারিনি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকার কারনে রোগবালাও ছিল না। আমার ১ বিঘা ১০ কাঠা জমিতে ৭০ কেজির বাস্তায় ৬৫ বস্তা ফলন হয়েছে। গতবার ফলনও কম ছিল, দামও ছিল না। খরচের টাকা তুলতে পারিনি। অথচ এবার পুরোটাই ভিন্ন চিত্র। জমি থেকেই ১৮ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে কিনছেন। গত মৌসুমে ৭ টাকা কেজি বিক্রি করতে পেরেছিলাম। কেজি প্রতি ৮/৯ টাকা করে লাভ হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলায় আগাম আলু তেমন ভাবে হয়না। শুধু মাত্র বিলের উচুঁ জমিতে চাষ হয়। কারন বিলের জমিতে বোরো চাষ হয় প্রচুর। আগাম আলু পৌর এলাকার জিওল রহিমা নামক উচুঁ জমিতে বরাবর চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও ধানতৈড় ও গোকুল গ্রামের নিচে সামান্য পরিমান জমিতে হয়ে থাকে। যদিও অতীতে আরো বেশি চাষ হত আগাম আলু। কিন্তু লোকসানের জন্য চাষ করেন নি অনেকে।
আগাম আলু চাষী ধানতৈড় গ্রামের রাব্বানী জানান, লোকসানের বোঝা নিয়ে ১ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে এত পরিমান লাভ হবে বুঝতেই পারিনি। কারন আগাম আলুতে প্রতি বছর লোকসান হয়। চাষাবাদ করতেই হবে। গত বৃহস্পতিবার আলু উত্তোলনের সাথে সাথে জমি থেকে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা কেজিতে ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়েছেন। ১ বিঘায় ফলন হয়েছিল ৪২ বস্তা, প্রতি বস্তায় আলু ছিল ৭০ কেজি। হিসাব করলে দেখা যায়, ৪২ বস্তা ৭০ কেজি করে ২ হাজার ৯৪০ কেজি আলু উৎপাদন হয়েছে, ১৮ টাকা ৫০ পয়সা কেজি হলে ৫৪ হাজার ৩৯০ টাকা দাম আসে। যা খরচের তুলনায় তিনগুন লাভ হয়েছে। যাকে বলে বাম্পার ফলন অধিক লাভে হাসীতে কৃষকরা। একই গ্রামের জব্বার ১০ কাঠা শামসুদ্দিন ১ বিঘা জমিতে আগাম আলু করে বাম্পার লাভ পেয়েছেন। ওই গ্রামের কৃষক আনারুল জানান, তারা ভাবতেই পারেনি এত লাভ হবে আগাম আলুতে। প্রতিবার লাভের বিপরীতে লোকসানের কারনে অনেকেই আগাম আলু না করে অন্য আবাদ বা জমি ফাঁকা রেখেছি। সার কীটনাশকের দাম অতিরিক্ত না হলে আরো লাভ পেত চাষীরা। সব আলু ট্রাকে করে খুলনার মোকামে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, আগাম আলু প্রায় ১৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে ও সঠিক পরামর্শের কারনে রোগ বালা ছিল না। এজন্য ফলনও ভালো হয়েছে এবং গতবারের চেয়ে তিন গুন বেশি দামে বিক্রি হয়েছে আগাম আলু।