অন্যান্য বছর আমের জন্য বিপদ হয় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। এবার সে বিপদ আসেনি। এ বছর আমচাষিদের বিপন্ন করেছে করোনা আর লকডাউন। চাষিরা গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি আমের দাম মোটামুটি ভালো পেলেও লক্ষণভোগ, ফজলি, গুটিসহ অন্যান্য প্রজাতির আমের দাম পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই সোমবার থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন হতে পারে- এমন খবরে আমচাষিরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন।
পুঠিয়ার আমচাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, লক্ষণভোগ শুরু থেকেই ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ। ফজলির মতো উৎকৃষ্ট আম বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে। এই দরে আম বিক্রি করে আম নামানো এবং হাটে তোলার জন্য যে ভ্যান ভাড়ার প্রয়োজন হয়, সেটাই উঠছে না। উৎপাদন খরচ তো উঠছেই না। সার ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি, কিন্তু আমের দাম নেই। বানেশ্বরের আমচাষি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমের চেয়ে বেগুন, আলু ও পটোলের দাম বেশি, আমগাছ রেখে কী হবে?
বাঘার আমচাষি সফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, গাছে আম আছে; কিন্তু চাষির পকেটে টাকা নেই। গাছে আম পেকে পড়ে আছে। নামানোর লোক নেই। কারণ নামানোর খরচ উঠছে না। লকডাউনের ঘোষণা আসার পরই আড়তদাররা আম পাঠাতে নিষেধ করছেন। কারণ মানুষ বাইরে বের হতে না পারলে আম কিনবে কীভাবে?
তিনি বলেন, আমি আম পাঠাই চট্টগ্রাম, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার আড়তে। তাদের কোনো খরচ নেই। যা বিক্রি হবে তার ওপর তারা ১০ শতাংশ কমিশন পাবেন। তবু তারা পাঠাতে নিষেধ করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাও একই অবস্থা । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট উপজেলার আমবাজারে ফজলি আম রকম ভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, আম্রপালি রকম ভেদে ১৫০০ থেকে ২০০০, ল্যাংড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং ক্ষীরশাপাতি রকমভেদে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
কানসাট আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু জানান, সোমবারের লকডাউনকে কেন্দ্র করে আমবাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। যে কয়েকজন আম ব্যাপারি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছিলেন তারা আম কেনা বন্ধ করে এলাকা ছাড়ছেন। ক্রেতা সংকটে আম কেনাবেচা একরকম বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি মনু মোহন বাপ্পা অনলাইনেও আম বিক্রি করেন। তিনি বলেন, অনলাইনে কিছুটা দাম পেলেও হাটে দাম নেই। লকডাউনে আরও সর্বনাশ হলো। সরকারের উচিত হবে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেওয়া। মৌসুম শেষে অনেকেই এবার পথে বসবেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল আওয়াল বলেন, লকডাউনে আম পরিবহনে কোনো সমস্যা হবে না। তবে দাম কতটা পাবেন বা পাচ্ছেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিসের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আম ফজলি ও আশ্বিনা। ফজলির দাম পাচ্ছে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, আম ব্যবসার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবকিছুই লকডাউনের আওতামুক্ত। তাই দেশব্যাপী ঘোষিত কঠোর লকডাউনে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।