শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

৭ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের ২৮ কর্মচারী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১২৪ বার পঠিত
৭ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের ২৮ কর্মচারী
 নীলফামারী  সংবাদদাতা:
 সৈয়দপুরে ১০০ শয্যা হাসপাতালের ২৮ কর্মচারীটানা সাত মাস ধরে বেতন পাচ্ছেননা। এতে অর্থাভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চরম দুর্দশায় দিনাতিপাত করছেন তাঁরা। এরই মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগে নতুন করে টেন্ডার দেয়ায় বকেয়া বেতন না পাওয়া এবং চাকুরী হারানো নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন এসব কর্মচারীরা।
আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২০২০ সালের জুলাই মাসে এসব কর্মচারীদের নিয়োগ দেয়া হয় ঠিকাদারের মাধ্যমে। এদের বেতন পরিশোধের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয় এক কোটি টাকা। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বেতন পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৬৮ লাখ টাকা। কিন্তু ২০২১ সালের জুলাই মাস হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই ২৮ কর্মচারী পায়নি তাদের বেতন। এ জন্য প্রকল্পে নিযুক্ত কর্মচারীরা ঠিকাদারের গাফিলতিকেই দুষছেন।
আউটসোর্সিং কর্মচারী রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম রনি ও মশিউর রহমান জানান,
আমরা ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছি, মাস শেষে বেতন পরিশোধ করবেন ঠিকাদার। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেতন না দেয়ায় আমরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম সঙ্কটে আছি। ধারদেনা করে সংসার চলছে। দোকানিরাও বাকিতে পণ্য দিতে চাইছেন না। ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে। আজকাল করতে করতে ৭ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলো কিন্তু বেতনের কোন খবর নেই।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নতুন করে কর্মচারী সরবরাহে টেন্ডার আহ্বান করেছেন। এতে করে আমাদের পাওনা নিয়ে আমরা অজানা আতংকে দিন অতিবাহিত করছি। আমাদের জীবনে অনিশ্চয়তা এখন দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নর্থবেঙ্গল সিকিউরিটি সার্ভিসেসের সত্ত্বাধিকারী আব্দুল ওয়াদুদ মুঠোফোনে জানান, এক বছরের চাকুরী, তারা বেতনও পেয়েছে এক বছরের। তারপরও নতুন টেন্ডার না হওয়ায় তাদের বাদ দেয়া হয়নি। বরাদ্দ পেলেই বকেয়া টাকা দেয়া হবে।ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়েছে, আবারও কাজ পাবো। তখন আর কোন সমস্যা থাকবেনা।
কর্মচারীদের বেতন বকেয়া ও নতুন টেন্ডার আহ্বান বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের উপ-পরিচালক নবিউর রহমান কর্মচারীদের বেতন না পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ২০২১ সালের বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে বেতন বাবদ ৬৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে গত জুন মাস পর্যন্ত।
জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পরিশোধ বাবদ ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত এ অর্থ ছাড় করার দায়িত্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের দায়দায়িত্বও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। আমরাও অফিসিয়ালি চিঠি চালাচালি করছি। ইতোমধ্যে মহা-পরিচালক (স্বাস্থ্য) বরাবরে অর্থ ছাড়ের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।
এদিকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসও শেষ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ছিলো ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে টেন্ডার দিতে হলো নতুন করে। ৩০ জানুয়ারি আউটসোর্সিং কাজের জন্য টেন্ডার ড্রপ করা হয়। এতে ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছে। দ্রুতই এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
নতুন কেউ ঠিকাদারি পেলে কি এই ২৮ কর্মচারীর বকেয়া বেতন পরিশোধ করা বা তাদের চাকুরীতে বহাল রাখা হবে? এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এমনকি বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের ব্যাপারেও তিনি কোন নিশ্চয়তা প্রদান তথা দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৈয়দপুর ৫০ শয্যা হাসপাতালকে ২০১৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বেড়ে যায় রোগীর সংখ্যা। অথচ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়লেও বাড়ানো হয়নি জনবল কাঠামো।
ফলে হাসপাতালে নিত্যদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। রোগীরা কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ে। সে কারণে জনবল বাড়াতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন পদে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয় ২০২০ সালের জুলাই মাসে। শূন্য পদগুলো হলো ওয়ার্ড বয়, টিকেট ক্লার্ক, ওটি বয়, ইলেকট্রিশিয়ান ও মালি। এসব পদেই নিয়োগ দেয়া হয় ওই ২৮ কর্মচারীকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..