২০২১-২২ বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের
কর্মসংস্থান ও সুরক্ষা খাতের বরাদ্ধ বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার:বর্তমান সরকারের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং এই সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকার বলে আমারা বিশ্বাস করি। যা আমারা দেখেছি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন পাশের মাধ্যমে। কিন্তু এর পরে আমরা আরে তেমন কোন অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। আপনারা অবগত আছেন যে গত ৩ জুন, ২০২১ ঘোষিত এবারের ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষের সংগঠনসমূহ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে একাধিক ওয়েবিনার, সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা দেয়া সত্ত্বেও তার একটিও আমলে নেয়া হয় নি। ফলে সাধারণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা খুবই মর্মাহত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকারের কাছে প্রতিবন্ধী মানুষের এর চেয়ে বেশি প্রত্যাশা। আজ ১৯ জুন, ২০২১ শনিবার, বেলা ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২০২১-২০২২ বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।খবর বাপসনিউজ।
রওনক জাহান, ডাব্লিউডিডিএফ বলেন, কোভিড ১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নানামূখী সহায়তা ও প্রণোদনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শুধুমাত্র পপ্রতিবন্ধী ভাতা (৭৫০ টাকা) প্রাপ্তির কারণে সরকারি এ সকল সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, গত দুবছর যাবত বাজেটে আমাদের দাবি দাওয়ার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তাই প্রতিবন্ধী মানুষ অনেক আশায় বুক বেঁধেছিল যে, মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের বাজেটে ভাতার পরিমান বৃদ্ধি হবে। কিন্তু ভাতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় প্রতিবন্ধী মানুষেরা হতাশ হয়েছে। দেশের অর্থনীতির আকার বাড়লেও প্রতিবন্ধী মানুষের বরাদ্দ ও কর্মসংস্থান।
রাজিব শেখ, এইচডিডিএফ বলেন, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির শ্লথগতি, শিক্ষা ব্যবস্থায় সেশন জটে পড়ার সংকট ও করোনা ভাইরাস জনিত অভিঘাতে প্রতিবন্ধী মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। কোভিড ১৯ এর কারণে সৃষ্ট মহামারিতে যেখানে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত সেখানে বলা বাহুল্য এদেশের প্রতিবন্ধী মানুষেরা কতটা মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার সনদ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং এই আইনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেই কোন সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ। অথচ সরকার নিজে ‘সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র ২০১৫’ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতার পরিমান ১৫০০ টাকায় উন্নীত করায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শানজিদা আক্তার, ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্ট বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব সরকার সেটা আমরা প্রমান পেয়েছি আইন পাশের মাধ্যমে। কিন্তু এখন সময় এসেছে আইন বাস্তবায়নের। গত দু’বছর যাবৎ প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর বদলে ভাতা প্রাপ্তির আওতায়ই বাড়ানো হচ্ছে যা প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনধারণে কোন প্রভাব ফেলছে না। মাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা দৈনিক আধা কেজি চালের দামের সমান বরাদ্দ। এই ক্রান্তিকালিন সময়ে কোন সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া যৌক্তিক সহযোগিতা হতে পারে না।
মানবন্ধনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বি-স্ক্যানের সাধারন সম্পাদক সালমা মাহাবুব তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব প্রতিবন্ধী মানুষদেরকে প্রতিনিয়ত হতাশ করে তুলেছে। তারপর প্রতিবন্ধীতার ভিত্তিতে বৈষম্যের কারণে প্রতিবন্ধী চাকরী প্রত্যাশীদের আশার বাধ যেন ভেঙ্গে পড়ছে। সরকারি ক্ষেত্রে কোটার ক্রমহ্রাসমানতা ও বেসরকারি ক্ষেত্রে অবাস্তব প্রণোদনা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি হচ্ছেনা। এছাড়াও ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোন সরকারি উপাত্তে খুঁজে পাওয়া যায়না। ফলে সরকারের তথ্য-উপাত্তের মতো বাজেটে অদৃশ্য রয়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী মানুষ। সরকার চাইলেই মাত্র আরো ৬০০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করলে প্রতিবন্ধী মানুষের ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা করা সম্ভব। আশা করি প্রতিবন্ধী মানুষের প্রাণ প্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী মানুষের এই প্রাণের দাবি পূরণ করবেন।
বি-স্ক্যানের সমন্ময়কারী ইফতেখার মাহমুদের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন এইউডিসি, বি-স্ক্যান, বিডিডিটি, সিবিডিসিপিও, ডিসিএফ, ডিডিআরসি, এইচডিডিএফ, এনসিডিডব্লিউ, এনজিডিও, পিএনএসপি, এসডিএসএল, সম্মেলন ফাউন্ডেশন, এবং ডব্লিউডিডিএফ সহ ১০ ডিপিও সংগঠনের প্রতিনিধী বৃন্দ।
তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধান ৭ দফা দাবি, আগামী ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত এবং বৃদ্ধি করার জন্য
• বাংলাদেশে নারী সংবেদনশীল বাজেট, শিশু বান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন-এর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা।
• সরকারের NSSS ২০১৫ তে প্রতিশ্রুত ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ভাতা ১৫০০ টাকায় উন্নীত করা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বজনীন ভাতা হিসেবে প্রতিবন্ধী ভাতার নামকরণ ‘সমসুযোগ ভাতা’ হিসেবে পরিবর্তন করা। নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজেবেলিটি ট্রাস্ট (এনডিডি ট্রাষ্ট), জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (জেপিইউএফ) ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট-এর মাধ্যমে গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যক্তিগত সহায়তাকারী (কেয়ারগিভার/পারসোনাল এ্যাসিসটেন্ট) ভাতা চালু করা। বেসরকারি চাকরিতে নিয়োজিত সকল প্রতিবন্ধী চাকরিজীবিদের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্মহীন বীমা (Disability Unemployment Insurance Scheme) চালু করা।
• প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বানিজ্যিক সংস্থায় ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিয়োগ করলে ৫ শতাংশ কর ছাড়ের বিধানটি সংশোধন করে, ২ শতাংশ নিয়োগ করলে ৩ শতাংশ কর ছাড়ের বিধান করা। যদি কোন প্রতিষ্ঠান এই নিয়োগে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ৩ শতাংশ অর্থ জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (জেপিইউএফ) এর ‘সহায়ক উপকরণ তহবিল’- এ জরিমানা হিসেবে প্রদান করা। এই তহবিলের মাধ্যমে জেপিইউএফ উন্নতমানের সহায়ক উপকরণ প্রতিবন্ধী মানুষকে বিনামূল্যে প্রদান করা।
• কর্মহীন বেকার গ্রামীন ও নগর দরিদ্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ন্যাশনাল স্কীম-এর আওতায় এনে বছরে কমপক্ষে ২০০ দিনের জন্য মজুরি ভিত্তিক কাজের ব্যবস্থা করা। তা না হলে ১৫০ দিনের জন্য বেকার ভাতা প্রদান করা।
• প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকার পূণঅর্থায়ন তহবিল সৃষ্টি করা এবং সেখান থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনা জামানতে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করা। কোটা পূরণে সফল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘বঙ্গবন্ধু আর্থিক অন্তর্ভুক্তি পুরষ্কার’ চালু করা।
• বাংলাদেশের সকল গণস্থাপনা ও গণপরিবহন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল মানুষের উপযোগি করতে তহবিল বরাদ্দ এবং প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতে প্রতিটি তহবিলপ্রাপ্ত স্থাপনা ও পরিবহনের তালিকা প্রকাশ করা এবং এই তালিকা ভূক্ত পরিবহন ও স্থাপনাসমূহে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন (ডিপিও)-এর মাধ্যমে প্রবেশগম্যতা নিরীক্ষার (Accessibility Audit) ব্যবস্থা করা।
• অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠন ও অভিভাবক সংগঠনের কার্যক্রমকে বেগবান করতে এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের আরো সংগঠিত করতে সংগঠনসমূহের প্রতিটি কার্যক্রমের ব্যাপকতা অনুযায়ী সরকারি তহবিল থেকে প্রতিবছর ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান প্রদান করা।