সাভারে স্ত্রীকে নির্যাতনের পর শশুরকে হত্যার চেষ্টা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার সাভারে স্ত্রীকে নির্যাতনের পর অপপ্রচার ও শশুরকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক পাষন্ড স্বামীসহ একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত স্বামীসহ তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মাঠে নেমেছে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পেশাজীবী এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
পাষণ্ড স্বামী সৈয়দ আমজাদকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা। স্ত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলা এবং শশুরকে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। স্ত্রী ও শশুরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় পৃথক আরেকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী শশুর সুনাম উদ্দিন সোহেল।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে সাভার প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে গৃহবধূ সুমাইয়ার পরিবারের লোকজনসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার শতাধিক লোক এবং সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন সামাজিক ও আইনি বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান জে এইচ রানা, সেক্রেটারি ইঞ্জিঃ অনিকুল ইসলাম, ফার্মেসি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি সেলিম চৌধুরী, স্টার ভিলেজ ডক্টর ফাউন্ডেশনের সভাপতি হাসিবুর রহমান লিমন, মহাসচিব খলিলুর রহমান, ম্যান ফর ম্যান ফোর্সের পরিচালক রাজিবুল ইসলাম রাজীব, বাংলাদেশ সেন্টাল এডুকেশন এন্ড হেলথ ফাউন্ডেশনের সাভার উপজেলা শাখার সভাপতি রিপন খান, সেক্রেটারি আব্দুল খালেক, আইন সহায়তা ফাউন্ডেশনের (আসক) সাভার উপজেলা শাখার সভাপতি আবু সাইদ ও সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে ভুক্তভোগী ও বক্তারা বলেন, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে মানিকগঞ্জের ধল্লা গ্রামের সুনাম উদ্দিন সোহেলের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনী মহল্লার সৈয়দ আক্কাস আলীর ছেলে সৈয়দ আমজাদ। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সৈয়দ আমজাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় এবং শশুর সুনাম উদ্দিন সোহেলের পুত্র সন্তান না থাকায় তার উপার্জনের বেশি অংশই মেয়ের সংসারে দিতেন। টিনশেড বাড়ি থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে মেয়ে ও মেয়ের জামাতাকে ভবন নির্মাণ করে দেন সুনাম উদ্দিন সোহেল।
তাঁরা আরো বলেন, ২০২১ সালে সুনাম উদ্দিন সোহেলের সহযোগিতায় সৌদি আরবে জান সৈয়দ আমজাদ। প্রবাসে গিয়ে স্ত্রী সুমাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি। সৌদি আরবে থেকে স্ত্রীকে জালিয়াতি করে তালাকের নোটিশ পাঠায় আমজাদ। পরে জানা যায় প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমজাদের নিকট আত্মীয় পারুল, মিউকি, সালমা, টুটুল ও শাহজাহান এক বিবাহ রেজিস্টারের সহযোগিতায় এই অপকর্ম করেন।
তারা বলেন, চলতি বছরের ১৭ই মে গৃহবধূ সুমাইয়া জানতে পারেন তার স্বামী আমজাদ বাংলাদেশে এসে তার বোন পারুলের বাড়িতে আত্মগোপন করে আছে। বিষয়টি জানাজানি হলে সুমাইয়া তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে সকালে আমজাদের বোনের বাড়িতে গিয়ে তার স্বামীকে বাসায় আসতে অনুরোধ করলে তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। সুমাইয়া অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার দুই সন্তানকে লুকিয়ে রাখেন আমজাদের বোন পারুল ও মিউকি। খবর পেয়ে পরিবারের সহযোগিতায় রক্তাক্ত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে স্বামীর বোনের বাসা থেকে সন্তানদের আনতে গেলে ২২মে সন্ধায় দ্বিতীয় দফায় ইট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত ও পাশবিক নির্যাতন চালায় আমজাদ। ঘটনার পর সুমাইয়া বাদী হয়ে স্বামীসহ বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করেন।
ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গৃহবধূকে নির্যাতনের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়। গত ১ জুন অসুস্থ মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে ওই গৃহবধূর বাবা সুনাম উদ্দিন সোহেলকে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে প্রথমে সীমা জেনারেল হাসপাতাল ও পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবা ও মেয়ের বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগ তুলে অপপ্রচার ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন আমজাদ। মানববন্ধন থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুবেল হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে, ঘটনার সত্যতা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান সিকদার জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে।