সাকিবের ঘূর্ণিতে টাইগারদের অস্ট্রেলিয়া বধ
জসীম উদ্দিন ইতি
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচেও জয়
পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দেয়া ১২৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে
সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে মাত্র ৬২ রানে গুটিয়ে যায় অসিরা। আর এতে ৪-১ এ
সিরিজ জিতে নিল টাইগাররা।
সোমবার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২২ রানের সংগ্রহ
পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ২৭ বলে বিনা উইকেটে ৪২ রানের সূচনার পরও শেষ
পর্যন্ত বড় সংগ্রহ পায়নি টাইগাররা।
জয় দিয়ে সিরিজ শেষ করার লক্ষ্যে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট
স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের
পরিবর্তে উদ্বোধনী জুটিতে মোহাম্মদ নাইমের সাথে ইনিংস শুরু করেন মাহেদি
হাসান। প্রথম ৪ ওভারে বাংলাদেশকে ৩৫ রান উপহার দেন নাইম-মাহেদি। এরমধ্যে
নাইমের ১টি করে চার-ছক্কা ছিলো। মাহেদির ব্যাট থেকে আসে ২টি চার।
পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৪২ রানে মাহেদিকে থামান অস্ট্রেলিয়ার
স্পিনার অ্যাস্টন টার্নার। ১২ বলে ১৩ রান করেন মাহেদি। এই সিরিজে
উদ্বোধনী জুটিতে এই ৪২ রানই বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ।
এরপর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে সতর্কতার সাথে দলের স্কোর বাড়ানোর পথেই
হাচ্ছিলেন নাইম। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। নবম ও দশম ওভারে আউট
হন নাইম-সাকিব। ১টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ২৩ রান করে ড্যান
ক্রিস্টিয়ানের শিকার হন নাইম।
২০ বলে ১১ রান করে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এডাম জাম্পার শিকার হন সাকিব।
তার ইনিংসে কোন বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি ছিলো না।
শুরুটা ভালো হলেও, ৬০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ
দূর করার চেষ্টা করেন ধারাবাহিক ব্যর্থতায় চার নম্বরে খেলতে নামা সৌম্য
সরকার ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১২তম ওভারে জাম্পাকে ছক্কা মেরে
ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ১৪তম ওভারে থেমে যান
মাহমুদুল্লাহ। ১৪ বলে ১৯ রান করে আগারের শিকার হন তিনি। সৌম্যর সাথে ২১
বলে ২৪ রান করেন টাইগার নেতা।
অধিনায়কের বিদায়ের ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকান সৌম্য। পরের ওভারের
চতুর্থ বলে বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। এতে আজ ভালো কিছু করার
আত্মবিশ্বাস পান সৌম্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। ক্রিস্টিয়ানের পরের বলে
থামতে হয় তাকে। ১৮ বলে ১৬ রান করেন তিনি। প্রথম চার ম্যাচে ১২ রান
করেছিলেন এই বাঁ-হাতি।
ছয় নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সুবিধা করতে পারেননি। সিরিজের
তৃতীয় ও নিজের অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্টিক করা মিডিয়াম পেসার নাথান এলিস আউট
করেন নুরুলকে। ১৩ বলে ৮ রান করেন তিনি। ১১০ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে
আউট হন নুরুল। তখন বাংলাদেশের ইনিংসের ১৪ বল বাকি ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের দৃঢ়তায় শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশের
লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। শেষ ১৪ বলে মাত্র ১২ রান তুলে বাংলাদেশ। এতে
৮ উইকেটে ১২২ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। ১১ বলে ১টি ছক্কায় ১০ রান করে
এলিসের দ্বিতীয় শিকার হন আফিফ হোসেন। ৮ বলে ১টি চারে ৪ রান করে অপরাজিত
ছিলেন মোসাদ্দেক। প্রথম ছয় বলে কোন রানই নিতে পারেননি মোসাদ্দেক।
অস্ট্রেলিয়ার এলিস-ক্রিস্টিয়ান ২টি করে উইকেট নেন।
এরপর ব্যাটিংয়ে এসে বাংলাদেশের আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই
পারেনি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। নিজের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ ৬২ রান
করে অসি ব্যাটসম্যানরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন অস্ট্রেলিয়ান
অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। এছাড়া ম্যাক ডরমটের ১৭ রান বাদে আর কোনো
ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান স্পর্শ করতে পারেনি।
বাংলাদেশের পক্ষে ৯ রানে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। এর
মধ্য দিয়ে তিনি হন বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার যিনি আন্তর্জাতিক
টি-টুয়েন্টিতে ১৫০০ রান ও ১০০ উইকেটের মাইলফলক পার করলেন। এছাড়া
মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ১২ রানে ৩ উইকেট, নাসুম ৮ রানে ২ উইকেট এবং
মাহমুদউল্লাহ নেন একটি উইকেট। ম্যাচসেরা ও সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব আল
হাসান।