মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর, নির্বিঘ্নে ধর্মীয় সম্প্রীতির মাধ্যমে দুর্গা পূজা আয়োজনে সর্ব মহলে প্রশংসিত জেলা প্রশাসক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৬ বার পঠিত

শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর, নির্বিঘ্নে ধর্মীয় সম্প্রীতির মাধ্যমে দুর্গা পূজা আয়োজনে সর্ব মহলে প্রশংসিত জেলা প্রশাসক

এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ

শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর, আনন্দমুখর পরিবেশে ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বেষ্টনীর চাদরে ঢেকে রেখে নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। শুরু থেকেই এ উৎসব কে উৎসব মুখর ও শান্তিপূর্ণ ভাবে আয়োজন করতে জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহ জাতি ধর্ম-বর্ণ দল-মত নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া। এবং তার আহবানে সাড়া দিয়ে সকলেই মিলেমিশে পূজা মণ্ডপ গুলির খোঁজখবর নেন এবং সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সকলেই অক্লান্ত পরিশ্রম ও যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যার ফলশ্রুতিতে এইবারের পূজা উৎসব অন্যবারের তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণ, আনন্দমুখর, উৎসব মুখর, নির্বিঘ্নে আয়োজন ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারায় সনাতনী ধর্মাবলম্বী সহ সর্বমহলে প্রশংসিত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। নারায়ণগঞ্জ ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়া।

রাজধানী ঢাকার পর সবচেয়ে জাকজমকপূর্ণ দুর্গাপূজার আয়োজন হয় নারায়ণগঞ্জে। শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ঘনবসতিপূর্ণ এ জেলার জনসংখ্যা অত্যাধিক বেশি। তাই নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন নিশ্চিতের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এ বছর জেলার ২২৪টি পূজা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুর্গোৎসব। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া হিন্দু ধর্মালম্বীরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উপভোগ করতে পারে তার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে হয়। পূজা মণ্ডপগুলোর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রায় ৮৫০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া সতর্ক অবস্থানে ছিল সেনাবাহিনী, রেব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড সহ বিভিন্ন সংস্থা।

একই সাথে পূজার পুরো সময় সার্বিক বিষয় তদারকি করার লক্ষ্যে পূজাপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে শহরের পাশাপশি বিভিন্ন উপজেলাগুলোর পূজা মণ্ডপগুলো পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ও জেলা পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের দিকনির্দেশনায় পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনে উপজেলা প্রশাসনও নিয়মিত পূজামণ্ডপগুলো পরির্দশন করে ও বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনী, রেব, পুলিশ বিজিবি, সদস্যরা টহল দেন। যা বিজয়া দশমীর প্রতীমা বিসর্জন পর্যন্ত দেখা যায়।

পূজার সার্বিক প্রস্তুতি নিশ্চিতের লক্ষ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার উদ্যোগে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা প্রশাসন, সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, আনসার, পূজা মণ্ডপগুলোর কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিল।সেদিন জেলা প্রশাসক আনন্দমুখর পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন ও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আহ্বান করেছিলেন।

পূজা শুরুর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে শহরের টানবাজার সাহাপাড়া সর্বজনীন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হোসেন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মোনাব্বর হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শংকর কুমারসহ অনেকে।

২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর শহরের মিশনপাড়া রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম ও আমলাপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড নারায়ণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. জিয়াউর রহমান।

২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু হয়। এদিন রূপগঞ্জ উপজেলার একাধিক পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক।

মহাসপ্তমী (২৯ সেপ্টেম্বর) বন্দর উপজেলার পূজা মণ্ডপগুলোর পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক। একই সাথে তিনি রাজাঘাট বেনী মাধব ব্রহ্মচারী সমাধি মন্দির পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি পূজা উপলক্ষ্যে মণ্ডপগুলোকে আর্থিক অনুদান দেন। এসময় উপস্থিত ছিল জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট কানিজ ফারজানা শান্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) নাঈমা ইসলাম, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা) মো. তারিকুল ইসলাম, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

একইদিন দুপুরে ফতুল্লার ডিআইটি মাঠ সংলগ্ন শ্রী শ্রী শ্যামা কালী মন্দির পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড কম্পোজিট স্টেশন পদ্মা (ঢাকা জোন)-এর স্টেশন কমান্ডার মো. রাফায়েল মনোয়ার উৎসব।

মহাষ্টমী (৩০ সেপ্টেম্বর) সোনারগাঁ উপজেলায় পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন।

মহানবমীর দিন (১ অক্টোবর) শহরের মণ্ডপগুলো পরিদর্শন করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ও সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী ও আনসার কমান্ড্যান্ট কানিজ ফারজানা শান্ত।

দুপুরে শহরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল মো. জিয়াউল হক।

একই দিন সন্ধ্যায় শহরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম পরিদর্শন র্যাব-১১ এর মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শহীদুর রহমান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এসএম সাজ্জাদ হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান প্রমুখ।

দশমীর দিন (২ অক্টোবর) প্রতীমা বিসর্জনের সার্বিক ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি বিষয়ে কঠোর নজরদারি ছিল প্রশাসনের। বিসর্জনের মতো জনসমাগমপূর্ণ আয়োজনে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে সে লক্ষ্যে সজাগ ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ লক্ষ্যে বিকেলে শহরের ৩ নম্বর মাছ ঘাট পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুরো জেলা জুরে বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বিকেলে ফতুল্লা লঞ্চঘাট সংলগ্ন প্রতিমা বিসর্জন ঘাটে প্রস্তুতি দেখতে ঘাট পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিলুফার ইয়াসমিন। বিকেল ৫টায় জেলা প্রশাসক নিজে বিসর্জন স্থান পরিদর্শন করে।

অন্যদিকে রাত সাড়ে ১২টায়ও জেলা পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিনকে ৩ নম্বর মাছ ঘাটে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। একই সাথে সেনাবাহিনী, রেব , বিজিবি, কোস্ট গার্ড আনসার বাহিনী সহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

সার্বিক প্রস্তুতি, নিয়মিত পরিদর্শন এবং চার স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলভাবে নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদযাপন সম্পন্ন করেছে। প্রশাসনের এই সতর্কতা ও তৎপরতার কারণে উৎসবকেন্দ্রিক যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

সকল পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও সহযোগী সংস্থাগুলোর নিবিড় তদারকি, সহমর্মিতা ও দায়িত্বশীল মনোভাব স্থানীয় জনগণ এবং পূজামণ্ডপ কমিটিগুলোর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এ ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জে সামাজিক শান্তি ও সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতের ধর্মীয় উৎসবেও শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে করেন নারায়ণগঞ্জবাসী।ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সম্প্রীতি শহর নারায়ণগঞ্জ এটাই প্রমাণ করলো জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..