লকডাউনে রাজশাহীর সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল আগের দিনগুলোর চেয়ে বেড়েছে।
তরিকুল ইসলাম তারেক রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
কঠোরতম লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে রাজশাহীর সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল আগের দিনগুলোর চেয়ে বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের দিনের চেয়ে বেশি তৎপর দেখা গেলেও দোকানি, ক্রেতা, পথচারী অনেকেরই মাস্ক মুখে থাকছে না।
বুধবার সকালে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, সাগরপাড়া ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কেউ চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছেন, আবার কেউ কাঁচাবাবাজারে ঘোরাঘুরি করে চলে যাচ্ছেন। আগের দিনের তুলনায় এদিন কাঁচাবাজার, মাছ ও মুদি দোকানে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। প্রধান সড়কে মানুষের সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যাও বেশি।
সাহেববাজার এলাকায় সেনাবাহিনী, আনসার, পুলিশ আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম দেখা গেছে। নানা ছুতোয় বের হওয়া মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তল্লাশি চৌকিতে, মাস্ক না পরায় করা হচ্ছে জরিমানা।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, অধিকাংশই জরুরি দরকার ছাড়া বের হয়েছেন এবং জানতে চাইলে নানা অজুহাত দিচ্ছেন। তাই, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে, তাদেরকেও জরিমানা করা হয়েছে।তিনি বলেন, কঠোরতম লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি রাজশাহীতে ১১ প্লাটুন সোনা, বিজিবি ও আনসার সদস্য কাজ করছে। এছাড়াও ২২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। এর মধ্যে নগরের চারটি ও উপজেলা পর্যায়ে ১৮টি।রাজশাহীতে লকডাউনের পঞ্চম দিনে মঙ্গলবার লকডাউনের বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ সময়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০ টাকা। আর স্বাস্থ্যবিধি না মানায় একজনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কাউছার হামিদ মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছিলেন।তিনি জানান, রাজশাহী নগরী ও উপজেলাগুলোতে এই জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে নগরীতে ৩২টি মামলায় ২৫ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। আর উপজেলাগুলোতে ৩৯টি মামলায় ১৯ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।এর মধ্যে জেলায় সবচেয়ে বেশি জরিমানা করা হয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলায়। এই উপজেলায় ৯টি মামলায় ৩ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এরপর বাঘা উপজেলায় ৫টি মামলায় ৩ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
পরে অবস্থানে রয়েছে জেলার দুর্গাপুর উপজেলা। সেখানে ১০টি মামলায় ২ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।চারঘাট উপজেলায় ৩টি মামলায় ২ হাজার ৭০০ টাকা ও পবা উপজেলায় ৪টি মামলায় এক হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া তানোর উপজেলায় ৫টি মামলায় ৫ হাজার টাকা ও বাগমারা উপজেলায় ৩ টি মামলায় ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
কাউছার হামিদ বলেন, লকডাউন চলাকালে সরকারের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার অভিযোগে দণ্ডবিধি-১৮৬০ এবং সংক্রামক রোগপ্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ, নির্মূল আইন-২০১৮ সালের আইনে ৭১ জনকে মামলা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে অসচ্ছল মানুষের মাঝে এক হাজার ৫০টি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বাত্মক লকডাউন চলাকালে বিধিনিষেধ অনুযায়ী, জরুরি ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানের বাইরে কেউ দোকানপাট খুলতে পারবে না। এ সময়ে অপ্রয়োজনে কেউ বাইরেও বের হতে পারবে না। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলেও মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কিন্তু লক্ষ করা গেছে, এই সময়েও কেউ কেউ দোকান খুলেছে। তাদের জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া যারা মাস্ক পরেননি, কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তাদেরও মামলা দেওয়া হয়েছে।