প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পানি। পানিতে এরই মধ্যে ডুবে গেছে পদ্মার পাড়ের শত শত পরিবারের ঘরবাড়ি। এ ছাড়া গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন বানভাসি লোকজন। আর উজান থেকে পানির তোড়ে ভেসে আসতে শুরু করেছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপারসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা।
তারা বলছেন, উজান থেকে আসা পানির তোড়ে এসব বিষাক্ত সাপ ভেসে আসছে। আশ্রয় নিচ্ছে পদ্মা পাড়ের ঝোপ-জঙ্গলে। ঢুকছে বাড়ি ঘরে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রয়োজনীয় কাজে নদীপাড়ে ও নদীতে যেতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক রনি ও টনি নয়া দিগন্তকে জানান, রাজশাহী নগরীর পঞ্চবটি এলাকা থেকে জাহাটঘাট পর্যন্ত দেখা মিলছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত সাপ। প্রায় সারা দিনই নদীতে ভাসতে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য সাপ। এসব সাপ এখন পদ্মাপাড়ের বাঁধ ব্লকের ফাঁক ফোকরে ও ঝোপ জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সাপ পিটিয়ে মেরেছেন স্থানীয়রা। তারা আরো বলেন, বর্তমানে নগরীর পদ্মাপাড়ের বাঁধ ব্লকের ফাঁক ফোকরে ও ঝোপ জঙ্গলে দেখা যাওয়া এসব সাপের অধিকাংশই রাসেল ভাইপারসহ একাধিক প্রজাতির।
সাপের আকৃতি দেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সাবেক শিক্ষক জানান, এগুলো বিষাক্ত প্রজাতির সাপ। তাই সাবধানে থাকতে হবে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের। সেই সাথে প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করতে হবে। সর্প দমন রোধে সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান তিনি। সূত্র মতে, রাসেল ভাইপারের বাংলা নাম চন্দ্রবোড়া। তবে রাসেল ভাইপার নামেই বেশি পরিচিত। এরা একেবারে সামনে থেকে মাথা উঁচু করে কামড় বসায়। এদের বিষের এত তিব্রতা যে, খুব কম রোগী বাঁচে। যে স্থানে কামড় দেয়; সে স্থানে পচন শুরু হয়। অনান্য সাপের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলে রোগীকে নিরাপদ ভাবা হয়। কিন্তু রাসেল ভাইপারের ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পথে মারা গেছে এমন রেকর্ডও রয়েছে।
রাসেল ভাইপার যে মানুষকে কামড়ায় তাকে বাঁচানো খুবই কষ্টকর। অনেক সময় বিষ নিষ্ক্রিয় করা গেলেও দংশিত স্থানে পচন ধরে। তারপর খুব অল্পসময়ের মধ্যেই রোগী মারা যান। পচা অংশ কেটে ফেলার পরেও জীবন বাঁচানো যায় না। দ্রুত পচন ধরে সারা শরীরে। এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হন। সাপটির বিষক্রিয়ায় অত্যাধিক রক্তক্ষরণ ঘটে এবং অনেক যন্ত্রণার পর মৃত্যু হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভয়ে হার্ট অ্যাটাকে অনেকের মৃত্যু হয়।
সূত্র বলছে, রাসেল ভাইপার বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। মাঝে ২৫ বছর এদের দেখা মেলেনি। কিন্তু ২০১২ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলের চাপাইনবাবগঞ্জে আবার এই সাপের দেখা মেলে। সে বছর এর বিষে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে মারা গেছেন ১৫ জন। গবেষকদের ধারণা, ২৫ বছর বিলুপ্ত থাকার পরে বন্যার পানিতে ভেসে ভারত থেকে এই সাপ বাংলাদেশে এসেছে। কারণ পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় এ সাপের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
২০১৩ সালে আবারো রাজশাহীতে দেখা মেলে সাপটির। এর আক্রমণে সবচেয়ে বেশি মারা যান কৃষক। সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয়েছে ধানক্ষেতে। তবে সাধারণত ঝোপ-ঝাড়, শুকনা গাছের গুঁড়ি, ডাব গাছের নিচে, গোয়াল ঘরে এ সাপ থাকতে বেশি পছন্দ করে। তবে চরিত্রগতভাবে এ সাপ স্থলে যতটা ক্ষিপ্র, পানিতে ততই দুর্বল থাকায় বন্যার পানিতে ভেসে আসা নিয়ে বিতর্ক আছে। রাসেল ভাইপার বংশ বিস্তার করে খুব দ্রুত। অন্যান্য সাপ যেখানে ২০ থেকে ৪০টা ডিম দেয়, সেখানে একটি রাসেল ভাইপার ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। ফলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে রাসেল ভাইপার।