রাজশাহীতে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
মো: তরিকুল ইসলাম তারেক রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
চলতি মাসের ১১ নভেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ৪নং রিশিকুল ইউনিয়ন
পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে গভীর রাতে নির্বাচিত প্রার্থীর
ফলাফল পরিবর্তন করে পরাজিত প্রার্থীকে বিজয় ঘোষণার প্রতিবাদে সংবাদ
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার নগরীর ভাটাপাড়াস্থ্য একটি কমিউনিটি
সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ
করেন ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুখলেসুর রহমান মুকুল।
তিনি বক্তব্যে বলেন, তিনি অটোরিক্সা প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি
প্রার্থী চেয়ে ৬৭৬ ভোট বেশী পেয়ে জয়লাভও করেন। তিনি বলেন, মোট ১০ টি ভোট
কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের ফলাফল সিট অনুযায়ী
তিনি ৭০২২ ভোট পান। আর তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী শহিদুল ইসালম
টুলু (নৌকা প্রতিক) পান ৬৩৪৬ ভোট। প্রতিটি ফলাফল সিটে নির্বাচনী
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষর করেন এবং সিলমোহর দেন।
এই ইউনিয়নে খুব সুন্দরভাবে আনন্দ মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
কোথাও কোন গোন্ডগোল হয়নি। ভোটারগণ নির্বিঘ্নে তাদের মতামত প্রদান
করেছিলেন। তার বিজয় সম্পর্কে পুরো ইউনিয়নবাসী জানেন। শুধু তাই নয় তাঁর
বিজয় নিয়ে বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর উপজেলা নির্বাচন
অফিসার কার্যালয় হতে বেসরকারীভাবে চুড়ান্ত ফলাফল দেয়ার পূর্বে গড়িমসি
শুরু করেন নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং রিটার্নিং
অফিসার। তাঁরা ফলাফল দিতে নানা ধরনের তাল বাহানা শুরু করেন। এক পর্য়ায়ে
রাত ২টার পরে ফলাফল পাল্টে দিয়ে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল
ইসলামকে (নৌকার প্রার্থী) নির্বাচন অফিসার বিজিত বলে ঘোষণা করেন।
মুকুল আরো উল্লেখ করেন তিনি আওয়ামী পরিবারের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। তিনি
২০০৩ সাল থেকে ২০১১সাল পর্যন্ত রিশিকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময়ে আওয়ামী লীগকে অত্র ইউনিয়নে বাঁচিয়ে
রেখেছিলেন তিনি। এখনো তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে
সদস্য পদে রয়েছেন।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে তিনিসহ প্রায় ১৩ জন দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন।
এরমধ্যে দল থেকে আবারও শহিদুল ইসলাম টুলুকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নিয়ে
পুরো ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কারণ
শহিদুল ইসলাম গত মেয়াদে এমন কোন খারাপ কাজ নাই যে তিনি করেন নি। তিনি
ভিজিডি ও ভিজিএফ এর চাল আত্মসাৎ, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেয়ার নামে
গরীব দু:খীদের নিকট হতে টাকা নিয়ে ঘর না দিয়ে সে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
তার এ সকল দুর্নীতি প্রমাণিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাঁর এ অবস্থা দেখে দলমত নির্বিশেষে ইউনিয়নবাসী তাঁকে নির্বাচন করার জন্য
বলেন। তাদের কথা রাখতে এবং ইউনিয়নের উন্নয়ন এবং জনসেবা সঠিকভাবে করার
জন্যই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত
করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো একটি কুচক্রীমোহল নিজস্বার্থ চরিতার্থ
করতে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয় ঘোষণা করেন।
এই মহলটি এটা কতটা অন্যায় ও নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়েছে তা আপনারাই বিচার
করবেন বলে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
মহান স্বাধীনতার মহানায়ক, বাংলাদেশের স্থপতি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু এবং
বাংলাদেশের সব থেকে সফল প্রধানমন্ত্রী, জাতীর জনকের কন্যা, বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার পরম শ্রদ্ধেও নেতা। তিনি
আওয়ামী লীগের বাহিরে নন। এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে কুচক্রী মহলের
ষড়যন্ত্র জনসমক্ষে তুলে ধরে তাদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য অনুরোধ জানান।
সেইসাথে তাঁর বৈধ বিজয় ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা
করেন তিনি। এ সমেয় উপস্থিত ছিলেন রিশিকুল ইউপি ২নং ওয়ার্ড সদস্য আতাহার
আলী ও সমাজ সেবক ফিরোজসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ঘোষিত বিজয়ী চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলু বলেন, আমি বিজয়ী হয়েছি
এবং নির্বাচন অফিস থেকে আমাকে ঘোষণাপত্র দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে
প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত ফলাফল শিটের ভোটের যোগফলে আপনি ৬৭৬ ভোটে
পিছিয়ে থেকে কিভাবে বিজয়ী হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এব্যাপারে
রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন অফিস ভাল বলতে পারবেন।