স্টাফ রিপোর্টার : আদালতে জামিন নিতে গিয়ে কারাগারে গেলেন যমযম হাউজিংয়ের মালিক সাভারের চিহ্নিত ভূমিদস্যু হাফেজ নুর মোহাম্মদ। এ খবরে এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেছেন অনেকে।
রবিবার সকালে শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলায় জামিন নিতে গেলে মহামান্য আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেআইনি জনতাবদ্ধে অনধিকার প্রবেশ করত হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করিয়া সাধারণ, গুরুত্বর জখম করাসহ চুরি, ক্ষতি সাধন, ভয়ভীতি হুমকি প্রদান ও হুকুমদানের অভিযোগে ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬/১১৪ পেনাল কোড ১৮৬০ ধারায় নানা ঘটনায় বিতর্কিত জমজম হাউজিং এর মালিক নুর মোহাম্মদকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন আলমনগর হাউজিংয়ের স্থায়ী বাসিন্দা ভূক্তভোগী শফিকুল ইসলাম। নুর মোহাম্মদ বলিয়ারপুর এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।
মামলার অপর আসামীরা হলো-বলিয়ারপুরের মৃত হোসেন আলীর ছেলে জয়নাল, হেলাল উদ্দিনর ছেলে ফিরোজ, শামসুলের ছেলে রাসেল, সিরাজের ছেলে সোহেল, আঃ হকের ছেলে বিশ্ব মিয়া, তামিম, হোসেন আলীর ছেলে , রুহুল, মৃত সিরাজুল হক মোল্লার ছেলে হাবিবুর রহমান, মফিজ উদ্দিনের ছেলে ফিরোজ, নুরু মিয়ার ছেলে আনিছ, ফয়েজ উদ্দিন, রাসেদ ওরফে লম্বা রাসেদ, জসিম, পাপ্পু, ইমন, লাভলু, আনিছ, গাউছ, আব্বাস, সুলতান এবং কাউছার। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০জনকে আসামী করা হয়।
ভূক্তভোগী শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, হাফেজ নুর মোহাম্মদ ধর্মীয় অনুভূতি পূজি ও আধিপত্য ব্যবহার করে যমযম নুর সিটি নামে একটি আবাসন স্থাপন গড়ে তুলেছেন। যার পেছনে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক পৈশাচিক নৃশংস ঘটনা। বিভিন্ন রকম ভোগান্তিতে ফেলে টাকা আত্মসাৎ করে হাজীদের সঙ্গে প্রতারণা, হাফেজ হয়েও সুদে টাকা গ্রহন করে ব্যবসা করা, আপন বোনদের সম্পত্তি দখল করে নিজের অবৈধ সম্রাজ্য বৃদ্ধি করাসহ নানা অন্ধকারের নির্মম সত্য গল্পের নিষ্ঠুর স্বাক্ষী যমযম সিটি। আমরা জানি, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লালসালু উপন্যাসের স্বার্থান্বেষী ও ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী মজিদের কথা, জানি তারই আরেকটি রচনা বহিপীর নাটকের ভন্ডপীরের কথা, হয়তো আমাদের সমাজের হাফেজ নুর মোহাম্মদতাদের দীক্ষায় দিক্ষিত হয়ে নতুন কোন এক নিকৃষ্ট চরিত্রে আমাদের মাঝে নিজেকে জানান দিতে চান।
তারিকুল ইসলাম নামের স্থায়ী এক বাসিন্দা জানান, যমযম হাউজিং শুরু থেকেই জবরদখল শুরু করে আবাসন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। আবাসন গড়তে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, নিজের আত্মীয়-স্বজন এমনকি সরকারী খাল-বিলও দখল করেছেন তিনি। তার রয়েছে বিশাল হেলমেড বাহিনী। কেউ তার এ অন্যায় কাজের বাধা দিতে গেলেই তাদের উপর তারা হামলা চালায়। এ নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষর ঘটনাও ঘটেছে। মামলা-মোকাদ্দমাও রয়েছে।
গেলো ২০ সেপ্টেম্বর দিনভর সাভারের বামনী খাল ও জলাশয় ভরাট করে দখল ও অবৈধ স্থাপনা তৈরী করার অপরাধে যমযম নুর সিটি হাউজিংয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। এসময় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে হাউজিং প্রতিষ্ঠানের লোকজনের বাধার মুখে পড়েন রাজউকের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে বাকবিতন্ডা শুরু করে তাদের উপর চড়াও হন যমযম হাউজিংয়ের ক্যাডারবাহিনী। এসময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজউকের জোন-৮ এর পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (উপ-সচিব) মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান। এসময় যমযম হাউজিংয়ের অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সাথে অবশিষ্ট অবৈধ স্থাপনাগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনাসহ যমযমের মালিককে জলাশয় ও খাল থেকে বালু সরিয়ে নিতে সময় বেধে দেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কর্মকান্ড স্থগিত ঘোষনা করেন ম্যাজিষ্ট্রেট।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইয়াহিয়া খান বলেন, অনুমোদনহীনভাবে এই হাউজিং কোম্পানীটি গড়ে উঠেছে। তারা জলাশয়, খাল দখল করে বালু দিয়ে ভরাট করে প্লট বিক্রি করছে যা আইনত অবৈধ ও অপরাধ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে যমযম হাউজিংয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
রাজউকের উপনগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযানে গিয়ে হাউজিং প্রতিষ্ঠানেরে লোকজনের বাধার মুখে পড়ি। পুলিশের সহযোগীতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে হাউজিং কোম্পানীর হাফেজ নুর মোহাম্মদকে ৫লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং একই প্রকল্পে অনুমোদনহীনভাবে ভবন তৈরীর অপরাধে মাসুদ পারভেজ নামের আরও এক ব্যক্তিকে ২লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শফিকুলের আইনজীবি তানভীর হোসেন রাজীব জানান, ভূমিদস্যু নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য বলে প্রমান করতে পারায় মহামান্য আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে তিনি সন্তষ্ট বলেও জানান তিনি।
অভিযুক্ত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছে সাভার মডেল থানা পুলিশ।