মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান তোরাব আলী
তরিকুল ইসলাম তারেক রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙ্গালি জাতীয় জীবনে একটি চেতনা ও অর্জনের নাম। স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা জীবন বাজি রেখে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করা হয়। যা মুক্তিযোদ্ধাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের এই বীরত্বগাঁথা সংগ্রামে ইতিহাস যেমন জাতিকে গর্বিত করে তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বঞ্চনা আর যথাযথ সম্মান না পাওয়ার বিষয়টিও ব্যাথিত করে। এমনি এক ৭১’র রঙ্গাণে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া তোরাব আলী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি।। তিনি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট সেরাপাড়া গ্রামের মৃত হাজী নাসিরুদ্দীন এর ছেলে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হতে শুনা যায় ৯ মাস যুদ্ধ করেও স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ। সুযোগ সন্ধানি কিছু স্বার্থপর মানুষ যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি হয়েছেন।
তাই ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার হালনাগাদ হলেও মামু, দুলালাভাই, তদবীর না থাকায় তালিকায় আসেনা না অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম। অবহেলা অযত্নে পরে থাকে সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধার গল্প।
তেমনি ৭১’র এক সম্মুখ যোদ্ধা তোরাব আলী । তাঁর বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার বর্তমান কাকনহাট পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড সেরাপাড়া গ্রামে কিন্তু যোদ্ধর সময় এই অঞ্চলটি ছিল পাকড়ী ইউনিয়নের এর অন্তর্ভূক্ত। তোরাব আলী স্বাধীনতা যুদ্ধে ৪ নং সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস ও ০৭নম্বর সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্বা লে. কর্নেল কাজী নূরুজ্জামান এর অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সনদপত্র লাভ করেন নি তবে মুক্তিযোদ্ধর সময় তার কিছু কাগজ পত্র ছিল যা পরে হারিয়ে যায় তিনি আমাদের প্রতিবেদক কে বলেন। তিনি পাহাড়পুর,লালগোলা,কাকনহাট এলাকা ও তানোর এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।
তোরাব আলী ১৯৭২ সালের ৩ নং পাকড়ী ইউপির আওয়ামীলীগ এর সভাপতি হওয়া সত্তে ১৯৭২ সালে হতে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় নাম উঠে আসেনি তাঁর। তিনি বর্তমান কিছু দিন আগে এক জন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারী ভাকে স্বীকৃতী পাওয়ার জন্য উপজেলা /মহানগর এর নিকট প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যাচাই বাচাই এর জন্য আবেদন করেছেন । আবেদন এর তারিখ- ২/৩/২০২১ ইং
প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও কোন তালিকায় তার নাম থাকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন না তিনি। তবে এলাকার লোকজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে জানলেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রালয়ের স্বীকৃতি পাননি তিনি। যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তোরাব আলী এ প্রতিবেদক কে বলেন, আমি দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধের সময় তার বাড়ি থেকে ছেলে আব্দুর রাজ্জাক সহ তার ৬/৭ জন আত্নীয় স্বজনদের পাক সেনারা ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। তিনি দেশ স্বাধীনতার পর ৩ নং পাকড়ী ইউপির দীর্ঘ দিন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতা হিসাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ত পালন করেন। তিনাকে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে প্রবীন ও পরীক্ষিত নেতা হিসাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়।পাক হানাদারের বুলেটের ভয় করিনি। প্রায় ৫০ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাইনি। কবে অপারে চলে যাব তার ঠিক নেই। মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাব এটাই আমি চাই। তিনি আরও বলেন আমার সহযোদ্ধাদের নাম আজ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কিন্তু আমার নাম নাই। আমার সহযোদ্ধারা হলেন মুক্তিযোদ্ধা শ্রী সুশিল সরেন (0302090093), শ্রী ঠাকুর মাঝি (0302090091) ও মো: আব্দুল মালেক (0302090099)।
আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সু-দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তারা যেন এই তোরাব আলী এক জন প্রকৃত আওয়ামীলীগী কর্মী তিনি যেনো অতি তাড়াতাড়ী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতী পাই।