বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন

মাছ কুটে ঘোরে হামার সংসারের চাকা।

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৯৭ বার পঠিত

মাছ কুটে ঘোরে হামার সংসারের চাকা।

সরকার সালাহউদ্দীন সুমন, রংপুর বিভাগ।

সহায়-সম্বলহীন বিউটি বেগম দুই সন্তান নিয়ে অকূলপাথারে পড়েন। দিশা খুঁজে পান না কেমন করে চলবে সংসারে চাকা। এমন সময় কাজ দেয় বিয়ের সময় বাবার বাড়ি থেকে দানে পাওয়া বঁটি। পুরোনো বঁটিতে ধার দেন, প্রতিবেশীর চুলার পোড়া ছাই আর একটা বালতি হাতে ছুটে যান সিটি বাজারে। সেখানে কাজ নেন মাছ কাটার। প্রথম দিনে আয় আসে ১০০ টাকা। সেই যে বঁটি হাতে ছুটে চলা বিউটি বেগমের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন মাছ কুটে চলছে তার সংসারের চাকা। রংপুর নগরীর নূরপুরের বাসিন্দা বিউটি বেগমের সংসারে অভাব এতটাই প্রকট ছিল যে দুই সন্তান ও তাকে রেখে চলে যান স্বামী।

বিউটি বেগম বলেন, ‘পেটের ভোকে (ক্ষুধা) বহু দিন উপোস আছনু। স্বামী ছাড়ি দিয়া চলি গেইছে। অ্যালা আর ভাতের অভাব নাই। মাছ কাটি নিত্যাও (প্রতিদিন) ৩০০ টাকা কামাই করো। তাক দিয়া মোর ছাওয়া দুইটার ভাত কাপড় হয়্যাও বাচে। মুই অ্যালা অনেক ভালো আছু।

এখন তিনি এ কাজ করে মাসে ৯-১০ হাজার টাকা আয় করছেন। দুই মেয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি সঞ্চয়ও করছেন। সিগারেট কোম্পানি এলাকার মাজেদা বেগমের চার বছর আগে স্বামী মারা যান। দুই মেয়েকে নিয়ে তিনিও দিশেহারা হয়ে যান সংসারের খরচ নিয়ে। উপায় না পেয়ে তিনি বেছে নেন মাছ কাটার পেশা।

মাজেদা বেগম বলেন, ‘ভাই শহরোর মানুষ সউগ তৈয়ার জিনিস চায়। মাছ কিনি বাড়িত বাছা-কুটার সময় নাই। ওই তকনে বাজারোতে কিনি হামারটে বাছি ধোয়াপাকলা করি নেয়। হামরাও সেই কাম করি ভালো সংসার খরচ চালাওছি। মাইনষের দুয়ারোত হাতপাতির নাগোছে না। দিন কামাই ভালোই হওচে।’

রংপুর সিটি বাজার, বাস টার্মিনাল মাছের আড়ত এলাকায় মাছ কুটে তাদের মতো নিম্নবিত্ত পরিবারে অর্ধশতাধিক নারী সংসারে অর্থে জোগান দিচ্ছেন। এতে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি অভাবী পরিবারগুলোতে ফিরেছে সচ্ছলতার হাসি।

গুপ্তপাড়ার বাসিন্দা আশরাফুল আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই বাড়ির বউয়েরা মাছ বাছা-কোটা করাকে বিরক্তি মনে করে। ঝামেলা সৃষ্টি করে। তাই দোকানে মাছ কিনে একেবারে রান্না উপযোগী করে নিয়ে যাই খালাদের (মাছ কুটার কাজে নিয়োজিতরা) কাছ থেকে। এ জন্য কেজিপ্রতি ৩০ টাকা দিতে হয়।’

মাছ কুটে ধুয়ে ব্যাগে ভরে নিচ্ছিলেন মুন্সীপাড়া গ্রামের আকরাম হোসেন। আকরাম হোসেন বলেন, ‘খালারা না থাকলে খুব সমস্যা হতো। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনে চাকরি করি। রান্নারই সময় পায় না। মাছ কোটা-ধোয়া করবে কখন। তাই মাছ কিনে খালার কাছে কেটে-ধুয়ে ব্যাগে নিলাম।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..