শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৭ অপরাহ্ন

ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর অগ্রভাগে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১
  • ১৫৭ বার পঠিত

 

ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর অগ্রবাগে সংযুক্ত আরব আমিরাত

আজিজুর রহমান ডুবাই  প্রতিনিধিঃ
কভিডের ১৯ কার্যক্রম গোটা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে । এরই মধ্যে নাগরিকদের প্রায় ৬৪ শতাংশকে কভিডের দুই ডোজ টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। বিতরণকৃত টিকার সংখ্যা ছাড়িয়েছে সোয়া কোটি ডোজ। দেশটির টিকাদান কার্যক্রমের এ সফলতার সবচেয়ে বড় সুবিধা আদায় করে নিতে যাচ্ছে আমিরাত। এরই মধ্যে সচল হয়ে উঠেছে আমিরাতটি। একই সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠছে ইউএইর দুবাইকেন্দ্রিক পর্যটন খাত।

জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণে কভিডের আগে থেকেই বিপাকে পড়ে গিয়েছিল ইউএইর অর্থনীতি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অর্থনীতির বৈচিত্র্যায়নের পরিকল্পনা হাতে নেয় দেশটি। এ বৈচিত্র্যায়ন পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল দুবাইকে কেন্দ্র করে। ইউএইর দুবাই আমিরাতকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়িক ও পর্যটন খাতের হীরা। এ পর্যটন খাতকে কেন্দ্র করেই বৈচিত্র্যায়ন পরিকল্পনা সাজিয়েছিল ইউএই। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের পথ রুদ্ধ করে দেয় মহামারী করোনাভাইরাসে

কভিডের অভিঘাতে গত বছর খারাপ সময় কাটালেও চলতি বছরের শুরুতেই ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় আরব আমিরাত । বাজারে টিকা আসার আগেই উৎস দেশগুলো থেকে দ্রুত টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করে আমিরাত সরকার। বর্তমানে বিশ্বের অন্য অনেক দেশ টিকার সংকটে ভুগলেও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আরব আমিরাতে তা এখনো দেখা দেয়নি। বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী দেশগুলোর অন্যতম হয়ে ওঠে আরব আমিরাত। টিকাদান কর্মসূচির এ সফলতা দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আবারো সচল করে তোলেছে দুবাইকে। গতি ফিরে পায় ইউএইর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বৈচিত্র্যায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নও।

কডিডের চলমান প্রবাহের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরোপ করা হচ্ছে লকডাউনসহ নানা কঠোর বিধিনিষেধ। এর বিপরীতে সচল হয়ে উঠছে দুবাই। গোটা বিশ্বেই পর্যটন খাত এখন দুর্বিপাকে। এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে দুবাইয়ে। সেখানে পর্যটন খাতের স্থগিত হয়ে পড়া পরিকল্পনাগুলো পুনরায় বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে দুবাই। চলতি বছরের শেষ দিকে সেখানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থগিত হয়ে পড়া এক্সপো ২০২০ দুবাই। এছাড়া আগামী বছর কাতারে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপকে ঘিরেও দুবাইয়ের পর্যটন খাতে নতুন কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৯ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পর মহামারীর কারণে গত বছরই প্রথম সংকোচনের মুখ দেখে দেশটি। কভিডের আঘাতে ইউ এ ইর অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি থমকে দিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটির আবাসন, বাণিজ্য, বিদেশী বিনিয়োগ ও জ্বালানি ব্যবসা। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দরপতন দেশটির জন্য পরিস্থিতি আরো দুরূহ করে তোলে।

ওই সময়ে বিভিন্ন খাতে কর্মরত বাংলাদেশীসহ প্রচুর প্রবাসী কর্মীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয় আরব আমিরাত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। এছাড়া দেশটিতে কর্মসংস্থান নিয়ে বড় ধরনের আশঙ্কা তৈরি করেছিল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনাও। যদিও দেশটির সরকারের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত ছিল টিকাকরণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার দিকেই। এ কার্যক্রমে সাফল্যের কারণে দেশটির বিভিন্ন খাত এরই মধ্যে সচল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশটিতে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট লাখ বাংলাদেশী প্রবাসী অবস্থান করছেন দেশটিতে । তাদের মধ্যে বিভিন্ন খাতের শ্রমিক ছাড়া ব্যবসায়ীও রয়েছেন ৫০ হাজার বাংলাদেশীর দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেশটিতে প্রবাসী শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফির এসেছে । বর্তমান সংক্রমণ প্রবাহের কারণে ২১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে ইউএই। এছাড়া দেশটি বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ট্রানজিট ফ্লাইট পরিবহনও বন্ধ করে রেখেছে। ফলে বর্তমানে আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশ পথের যোগাযোগ বন্ধ আছে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও বলছে, দ্রুত টিকাকরণের পাশাপাশি পর্যটন খাতের সম্প্রসারণ এবং সরকারি নীতির কারণে আরব আমিরাত খুব দ্রুতই মহামারীর আঘাত কাটিয়ে উঠতে যাচ্ছে।

টিকাকরণের পাশাপাশি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আমিরাত স্থানীয় সরকারের মহামারীকালীন বিভিন্ন পদক্ষেপে দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্ভব করে তুলেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
গালফ নিউজ জানাচ্ছে, মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পেছনে ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারগুলো। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ৫ হাজার কোটি দিরহামের (প্রতি দিরহামের বিনিময় হার বাংলাদেশী ২৩ টাকার সমান) বিনাসুদে ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

আরব আমিরাতেরকেন্দ্রীয় সরকারের এক প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করে বলা হয়, আগামী বছরের মধ্যেই করোনার ক্ষাত কাটিয়ে উঠতে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। একই সঙ্গে আগামী বছরের পুরো সময়জুড়েই দেশটিতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এবং জনগণের ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাবে। সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইউ এ ইর বার্ষিক প্রতিবেদনেও আগামীতে দেশটিতে উৎপাদন ও সেবা খাতে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ। এক্ষেত্রেও প্রধান অনুঘটক হিসেবে দেখা হচ্ছে জনগণের দ্রুত টিকা দান করুণ

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেশটিকে ঋণমানের দিক থেকেও এগিয়ে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স এরই মধ্যে ইউএইর ঋণমান ইতিবাচক পর্যায়ে থাকছে বলে নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে দেশটির অর্থনীতিকে অভিঘাত মোকাবেলায় সক্ষম করে তুলতে আমিরাত সরকারের পর্যাপ্ত মাত্রায় নীতি সহায়তামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও তা দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়টিরও প্রশংসা করেছে। সংস্থাটি মনে করছে, তিন বছরের মধ্যেই দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক-মহামারী পর্যায়ে উঠে দাঁড়াবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..