টালিউডের সবচেয়ে আলোচিত নাম এখন নুসরাত জাহান। এই মডেল, অভিনেত্রী ও সাংসদকে নিয়ে আমাদের দেশেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা চলছে। কলকাতার তারকারাও সরব। ভারতের রাজনীতিবিদেরাও বাদ যাচ্ছেন না। নুসরাতের ‘স্বামী’ নিখিল জৈনও নিজের মতো করে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
এ কথা নুসরাতও অস্বীকার করেন না যে দুই বছর আগে ঘটা করে তুরস্কে দুজনের সম্পর্কের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। তারিখটা ১৯ জুন, ২০১৯ সাল। তবে সেই আনুষ্ঠানিকতাকে ‘বিয়ে’ বলতে নারাজ নুসরাত। তাঁর দাবি, এই সম্পর্ক ‘বিয়ে’ নয়, ‘লিভ টুগেদার’। নুসরাত লিখিত বিবৃতি দিয়ে সরাসরি বলেছেন, তাঁরা বিয়ে করেননি। তিনি লিখেছেন, ‘তুরস্কের বিবাহ আইন অনুসারে সেই অনুষ্ঠান অবৈধ। উপরন্তু দুই ভিন্নধর্মাবলম্বী মানুষের বিয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে বিয়ে করা উচিত, যা এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। ফলত, এটা বিয়েই নয়। ভারতে সেই বিশেষ আইন না মানলে আইনি মতে এটি বিবাহ নয়, লিভ-ইন সম্পর্ক।’
তৃণমূল সাংসদ নুসারতের বিবৃতি প্রকাশের পর বামপন্থী হিসেবে পরিচিত অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র ফেসবুকে লিখলেন, ‘বিজেপিতে আমি এত দিন যোগদান করিনি। বিজেপির সঙ্গে লিভ-ইনে ছিলাম। তাই বিজেপি ছাড়ার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। ইতি মুকুল রায়।’
সম্প্রতি বিজেপি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুকুল রায়। সেই প্রসঙ্গে পোস্ট দিলেও তাতে নুসরাতকে ব্যঙ্গ করলেন শ্রীলেখা। তবে কি কোনোভাবে তিনিও অন্যকে ট্রোল করার জোয়ারে গা ভাসালেন? অস্বীকার করেন শ্রীলেখা।
এক লাইভে এসে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন, ‘আমি সত্যি কথা বলেছি। আমি মনে করি, একজন জনপ্রতিনিধি যদি অসততার আশ্রয় নেন, তাহলে সেটা অনুচিত। সেই প্রসঙ্গে আমার পোস্ট। নুসরাতের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমি ভাবিত নই। কিন্তু এখন তাঁকে আমি কেবল একজন অভিনেত্রী হিসেবে দেখতে পারছি না; তিনি একজন সাংসদ বটে।’
সেই লাইভে শ্রীলেখা আরও বলেন, ‘যদি সব গুজব সত্যি হয়, তবে “বিয়ে” ছেড়ে বেরিয়ে এসে অন্য এক মানুষকে ভালোবেসে তাঁর সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার ঘটনা প্রশংসনীয়। নুসরাত এবং আমার জগৎ ভীষণ আলাদা। কখনোই তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো মন্তব্য আমি করব না। এটা আমার স্বভাব নয়। তাই এটা ট্রোলিং নয়; অসততার বিরুদ্ধে মুখ খোলা।’
শ্রীলেখার প্রশ্ন, ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সংসদের রেকর্ড অনুযায়ী তিনি নিখিল জৈনকে বিয়ে করেছেন। আবার এখন বলছেন, তিনি বিবাহিত নন। সে কথা আগে স্বীকার করেননি কেন নুসরাত?’
দুই বাংলায় জনপ্রিয় উপস্থাপক, অভিনেতা মীর ওরফে আফসার আলীও পরোক্ষভাবে ট্রল করেছেন। গত শুক্রবার তিনি একটি পোস্ট করেন ফেসবুকে। লেখেন, ‘ইউরো কাপ ২০২০-তে আজ ইতালি আর আর একটা দেশের ম্যাচ।
যে দেশে কেউ একজন বিয়ে করেছিলেন বা করেননি’। শুধু বিনোদন দুনিয়ার তারকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাসিন্দারা নন, বিষয়টি রাজনৈতিক আলাপেও ঢুকে গেছে। কেননা, নুসরাত একজন সাংসদও। কাজেই বিষয়টিতে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে বিজেপি।
দলের আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালব্য ভারতীয় গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, নুসরাতের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ আনা যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আরও আক্রমণাত্মক। তাঁর ভাষায়, ‘এ তো প্রতারণা। বিয়ে হলো। একজন সাংসদ।
তিনি বলছেন, আমার বিয়েই হয়নি। সিঁদুরের ফোঁটা লাগিয়ে, রথ টেনে ভোটে জিতে গেলেন! কত নিচে নামবে বাংলার রাজনীতি!’এরপরেই দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, ‘যাঁর বিয়ে হলো না, তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে গেলেন!’
তাঁদের মন্তব্যের বিপরীতে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ টুইট করে বলেন, ‘প্রসঙ্গ নুসরাত জাহান: বিষয়টি ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে রাজনীতি বা দলের কোনো সম্পর্ক নেই। বিজেপির মালব্যের এসব নিয়ে টুইট না করাই ভালো। তর্ক শুরু হলে বিজেপির জন্য খুব একটা ভালো হবে না। তৃণমূল মানুষের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।’