বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মী পরিচয়দানকারী প্রতারক রুবেলের বিরুদ্ধে অর্থ হাতানোর অভিযোগ থানায়
জেলা প্রতিনিধি যশোর :- রুবেল হোসেন নামে কথিত এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় প্রতারণামূলক ভাবে অর্থ হাতানোর অভিযোগ করেছেন শামসুর রহমান নামে এক ব্যক্তি । অভিযোগ সূত্রে জানা, রুবেল হুসাইন পিতা-বজলুর রহমান, গ্রাম-ইছাপুর থানাপাড়া, (পাঁচ নামনা মসজিদের সামনে) থানা-চৌগাছা, জেলা-যশোর । সাংবাদিক হিসাবে শামসুর রাহমানের সহিত রুবেলের পরিচয় হয়। রুবেল মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়ীতে আসতো এবং সাংবাদিকতার সকল বিষয় নিয়ে আমার সহকর্মী হিসেবে কাজ করিতো। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সে আমার সাথে একত্রে সংবাদ সংগ্রহের কাজে লিপ্ত ছিল। সাংবাদিকতার প্রয়োজনে একটা ক্যামেরা কেনার জন্য শামসুর রহমানের কাছ থেকে গত ০৩/০১/২২ তারিখে ৪৫,০০০ টাকা ধার ন্যায় এবং পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হলে ১০ই জানুয়ারি টাকা ফেরত দিবে।শামসুর রহমান একসাথে কাজ করার সুবাদে তাকে টাকা ধার দেয়।
এরপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হইলেও রুবেল কোন টাকা পরিশোধ না করায় শামসুর রহমান রুবেলকে বারবার টাকা পরিশোধের জন্য অনুরোধ করার একপর্যায়ে রুবেল টাকা পরিশোধ না করে যোগাষযোগ বন্ধ করে দেয় এবং মোবাইল নাম্বার সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো থেকে ব্লক করে দিয়া আত্মগোপন করে। তারপর শামসুর রহমান খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে জানতে পারে রুবেল তাকে যে পরিচয় দিয়েছে সেটা মিথ্যা। তখন শামসুর রহমান রুবেল হোসেনের ছবি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ লাগায়। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে শামসুর রহমান জানতে পারে রুবেল আমাকেসহ অন্যদের তার যে ঠিকানা বলিয়াছে সেটা মিথ্যা। তার প্রকৃত বাসা যশোরে নয়। সর্বশেষ বিভিন্ন লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে জানিতে পারে রুবেল বর্তমানে চৌগাছাতে বাড়িসহ জমি কিনে বসবাস করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,রুবেল হোসেন তার বাড়ি কখনো মহেশপুর, কখনো যশোর, কখনো গাজীপুর, কখনো মানিকগঞ্জ, বলে পরিচয় দিত। সাংবাদিকতা পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে আত্মগোপন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ছেলেটিকে মাঝেমধ্যে চৌগাছাতে দেখা যায়, তার পরিবার সূত্রে ও তার কাছ থেকে শুনেছি সে ঢাকাতে চাকরি করে। তারা এখানে নতুন তাদের সম্বন্ধে আমরা বেশি কিছু জানিনা। ছেলেটি বেশিরভাগ সময়ই রাতে আসে এবং ভোর হওয়ার আগেই চলে যায়।
বিভিন্ন জেলার সংবাদকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়,রুবেল হোসেন নামের এই প্রতারককে একটি আইপি টিভির সাংবাদিকসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এরই অংশ হিসাবে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে রুবেল হোসেন। অবশ্য এই প্রতারক একটি বেসরকারি আইপি টিভির সাংবাদিক পরিচয় দিলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তথ্য সংগ্রহের জন্য যশোর নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমতি পত্র নিয়েছেন মুক্তালোক নামের একটি পত্রিকা থেকে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাঘারপাড়া এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছ থেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক রুবেল হোসেন।
খোঁজখবর নিয়ে আরও জানা যায় সাংবাদিক নামধারী রুবেল হোসেন যশোর সদর উপজেলার শামসুর রহমানের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা,কোদালিয়া বাজারের চা দোকানদার সুলতান এর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, কোটচাঁদপুরের এক নারীর কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ও ধার হিসেবে ৫২ হাজার টাকা নেয় এই আলোচিত প্রতারক রুবেল হোসেন।
কোটচাঁদপুরের ভুক্তভোগী ওই নারী জানাই, আমার স্বামীর সাথে কাজ করার সুবাদে রুবেল হোসেন বিভিন্ন সময় আমার সাথে কথাবার্তা বলত ও আমার বাসাতে যাতায়াত করতো। সে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম খারাপ কথা আমার কাছে বলে তার কাছ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করায় এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ মিথ্যা মামলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বশেষ তার পিতার অসুস্থতার কথা জানিয়ে ৫২ হাজার টাকা ধার হিসেবে নেয়। কিন্তু ধারের টাকা পরিশোধ করার জন্য তাকে বারবার বলার পরে মাত্র ২ হাজার টাকা আমাকে দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে এবং আত্মগোপন করে। আমি এতদিন তার পূর্ণ ঠিকানা না জানার কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি। আমি খুব শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোয়ালিটি টিভি এম ডি এস এম ফারুকী বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ হাতানো ও প্রতারণার অভিযোগে গত নভেম্বর মাসে রুবেল হোসেনকে কোয়ালিটি টিভি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে একটা বাটপার ও প্রতারক। সে জাল জাতীয় পরিচয় দিয়ে নিয়োগ পত্র গ্রহণ করে। যার কারণে অফিস তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।সে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের টেলিভিশনের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। যার কারণে তাকে আমরা বহিষ্কার করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী ক্যাম্পের আইসি এসআই কানু চন্দ্র বিশ্বাস জানান, অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি, আমি হাতে এখনো কাগজ পাইনি। কাগজ হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।