বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন: কুমিল্লার দুগাপুরে নারীদের উদ্যোগে জমজমাট বৈশাখী মেলা
নুরুল আহমেদ রনি কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার সদর উপজেলার অন্তর্গত দুগাপুর গ্রামে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। গ্রামীণ নারীদের উদ্যোগে আয়োজিত বৈশাখী মেলা এ বছরও ভিন্ন মাত্রায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল। উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদিন ধরে চলা এই মেলাটি গ্রামে এক অনন্য সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে, যা গত তিন বছর যাবত নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হচ্ছে।
স্থানীয় নারীদের একতাবদ্ধ চেষ্টায় এই মেলার সূচনা হয় তিন বছর আগে। প্রথম দিকে ছোট পরিসরে হলেও এখন এটি বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং প্রতিবছর এতে হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করছে। মেলায় ছিল প্রায় ২৫টির মতো বাহারি স্টল, যেখানে গ্রামীণ খাবার, পিঠা-পুলি, হস্তশিল্প, খেলনা, গয়নাগাটি, পোশাক, ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করা হয়।
এই মেলাকে কেন্দ্র করে নারীরা যেমন তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার পথও তৈরি হচ্ছে। মেলায় অংশ নেওয়া নারী উদ্যোক্তা আসমা আক্তার বলেন,
“আমরা কয়েকজন মিলে তিন বছর আগে ছোট পরিসরে শুরু করেছিলাম। এখন অনেক নারী আগ্রহী হয়ে অংশ নিচ্ছেন। মেলার মাধ্যমে আমরা শুধু আনন্দই পাচ্ছি না, নিজেরাও কিছু আয় করতে পারছি, এটা আমাদের জন্য খুবই গর্বের।”
আরেক নারী দোকানদার রেশমা বলেন,“আমি নিজের তৈরি করা নকশীকাঁথা, বালিশের কাভার ও মেয়েদের গয়না বিক্রি করি এই মেলায়। আগে এসব বাড়িতে বানিয়ে জমিয়ে রাখতাম, এখন এই মেলার কারণে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের মেয়েরা যে চাইলেই কিছু করতে পারে, সেটা এখন সবাই দেখছে।”
মেলায় শুধু বিক্রিবাটাই নয়, ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে পরিবেশিত হয় বাউল গান, কবিতা আবৃত্তি, শিশুদের নৃত্য এবং লোকজ সংগীত। শিশুদের জন্য ছিল দোলনা, খেলাধুলার আয়োজন ও ছোটখাটো প্রতিযোগিতা।
স্থানীয়দের মতে, এই বৈশাখী মেলা এখন শুধু একটি উৎসব নয়, বরং গ্রামীণ নারীদের স্বপ্ন পূরণের এক উজ্জ্বল প্ল্যাটফর্ম। এতে নারীদের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ছে, তেমনি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যও সমানভাবে লালিত হচ্ছে।
দুগাপুরের এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ অনেক গ্রামেই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারে—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।