বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

বাংলার গ্রামের ঐতিহ্য মার্বেল খেলা বিলুপ্তির পথে।

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৪৫ বার পঠিত

বাংলার গ্রামের ঐতিহ্য মার্বেল খেলা বিলুপ্তির পথে।

মোঃ এনামুল হক নড়াইল জেলা প্রতিনিধি।

শৈশবকালে স্কুল ফাঁকি দিয়ে খেলাধূলা সেই হারানো ধুলামাখা দিন, বুকের ভেতর আজও রঙিন শৈশব ডাকে শুধু, আয়রে আয়, আয়। নাগরিক কোলাহলে সবাই কুড়িয়ে তোলে শৈশব। সার্বিকভাবে দুরান্তপনা শৈশবের সঙ্গে আজ হারাতে বসেছে আবহমান গ্রামবাংলার মার্বেল খেলা।

এক সময় গ্রামের বা সমাজের শিশুরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করে সময় কাটাইতো। শৈশবজুড়েই থাকতো দুরান্তপনা।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলীন হতে চলেছে মার্বেল খেলা। চার দেয়ালের খাঁচায় আটকে যাচ্ছে শৈশব সৃস্মীময়।

শিশু ও বৃদ্ধা বলছেন, গ্রামবাংলার খেলাধুলা যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের মেধাবিকাশ। ইউটিউব,কার্টুন,টিকটক,ফানি, ভিডিও গেমসে আটকে যাচ্ছে শৈশবকাল।

শৈশবের রেখে আসা দিনের খেলাধূলা আজও মনে দোলা দিয়ে যায় সবার প্রাণে। মার্বেল খেলা যেমন ছিল জনপ্রিয় তেমনি স্মৃতিমধুর।শৈশবের দুরান্তপনা ছিল শারীরিক ও মানসিক বিকাশের মাধ্যম।

গ্রামের এই খেলা আমাদের আদী ক্রীড়া সংস্কৃতি। এক সময় গ্রাম্য খেলাধুলা আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করতো। গ্রাম্য খেলা বিলুপ্ত হতে হতে আজ তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।

অবুঝ কালে স্কুল ফাঁকি দিয়ে বা বিকালে রাস্তার পাশে মার্বেল খেলার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই, মুঠোভর্তি মার্বেল দাগের বাইরে ছুঁড়ে মেরে, নির্দিষ্ট আরেকটি মার্বেলে লাগানোর, সে কী চেষ্টাই না করেছে এককালে।

আমাদের গ্রাম্য জনগোষ্ঠীর বিশেষত শিশু কিশোরদের অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা মার্বেল খেলা।কালের পরিবর্তনে আমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাটি আজ বিলুপ্তির পথে।

মার্বেল খেলার জন্য কমপক্ষে দুইজন খেলোয়াড় দরকার হয়।৩জন,৪জন,৫জন বা ৭জন ৮জন মিলেও খেলা যায়,পরিষ্কার সমতল ভূমিতে এই মার্বেল খেলার জন্য উপযোগী।

প্রথমে দুইটি একটি রেখা টানতে হয়,রেখা থেকে চার-পাঁচ হাত দূরে একটি গর্ত করতে হয়, যেন একটি মার্বেল সেই গর্তে বসতে পারে। আঞ্চলিক ভাষায় রেখাটিকে ‘ডিসকলি’ বা ‘জল্লা’ কোথাও ‘জই’ নামে পরিচিত এবং গর্তটিকে ‘কেপ’ বলে।

দাগের বাইরে পা রেখে প্রত্যেকে একটি করে মার্বেলটি গর্তে ফেলার চেষ্টা করে। যার মার্বেল গর্তে পড়ে বা সবচেয়ে কাছে যায় সে প্রথম দান পায়।

সবাই প্রথম যে দান পায় তার হাতে ২/৩/৪টি করে মার্বেল জমা দেয়,সে মার্বেলগুলো ছকের বাইরে বসে সামনের দিকে ওই গর্তের আশপাশে ছড়িয়ে দেয়। এরপর অন্য খেলোয়াড়রা একটা নির্দিষ্ট মার্বেলকে বলে ‘বাদ’। অর্থাৎ ওই মার্বেল ছাড়া,বাকি যে কোন একটি মার্বেলকে অন্য একটি মার্বেল ছেড়ে দিয়ে স্পর্শ করতে হবে। যদি এমনটা পারে তাহলে ওই দান সে জিতে যায়,আর না পারলে পরবর্তী আরেক জন একইভাবে খেলার সুযোগ পায়।

তবে ‘বাদ’ দেয়া মার্বেল কিংবা অন্য একাধিক মার্বেলকে ছুড়ে দেয়া মার্বেল স্পর্শ করলে ওই খেলোয়াড়কে ফাইন দিতে হয় এবং দান জেতার জন্য পরবর্তী খেলোয়াড় ফাইন হওয়া মার্বেলসহ সেগুলো ছড়িয়ে দিয়ে খেলতে থাকে।

যে কেউ দান জিতে আবার পুনরায় খেলা শুরু হয়। এভাবেই চলতে থাকে যতক্ষণ না প্রতিপক্ষ আত্মসমর্পণ করে কিংবা তার কাছের মার্বেল শেষ না হয়।আমাদের এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি টিকে রাখা অত্যন্ত জরুরি,তাই বিলুপ্তপ্রায় খেলাগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে শিশুরা মোবাইল থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..