বাংলাদেশ সেন্টারে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক: সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ, মেজরিটি নিয়ে বিভ্রান্তি
প্রতিবেদন: মো. কাজল ইব্রাহিম, বাংলাদেশ
লন্ডন থেকে আনোয়ার হোসেনের তথ্যমতে: বাংলাদেশ সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবাসী সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। তবে সম্প্রতি পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ২৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সেন্টারের নির্বাচন ঐতিহাসিক হলেও, নির্বাচনের পর পরই সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন প্রার্থী এবং সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে নির্বাচনে সংবিধান লঙ্ঘনের কারণে তাদের অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে ১২৫ জন সদস্যকে ভোট প্রদান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ৪ জন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, এবং ১১১ জন স্থায়ী সদস্য রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, মেজরিটি লাভের উদ্দেশ্যে গঠিত ‘গ্রিন এলায়েন্স’ নামে একটি দল ২০ জন স্থায়ী সদস্যের পরিবর্তে ১৮ জনকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একইসঙ্গে ‘রেড অ্যালায়েন্স’ নামে আরেকটি দল সাধারণ এবং জীবন সদস্যদের মধ্যে থেকে ১৫ জনের পরিবর্তে ১৭ জনকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা নিয়মিত প্রক্রিয়ার বিরোধী।
বাংলাদেশ সেন্টারের সংবিধান অনুসারে, ২০ জন স্থায়ী সদস্য এবং ১৫ জন সাধারণ ও জীবন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচনের পর দেখা যায়, সংখ্যাগত গড়মিলের কারণে মেজরিটি গঠন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক সদস্য মনে করছেন, সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সেন্টারের চেয়ারপারসন হিসেবে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারকে সংবিধানের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতে আইনি পরামর্শ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নির্বাচন সংবিধানের সঠিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ না করেই পরিচালিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, রেড ও গ্রিন এলায়েন্সের পক্ষ থেকে গঠিত মেজরিটি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, ১৭ জন জীবন সদস্য এবং ১ জন স্থায়ী সদস্য নিয়ে গঠিত রেড এলায়েন্স এবং ১৭ জন স্থায়ী সদস্য নিয়ে গঠিত গ্রিন এলায়েন্সের মধ্যে বিভ্রান্তি চরমে পৌঁছেছে।
দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সাবেক সেক্রেটারি নিজেকে পুনরায় সেক্রেটারি হিসেবে ঘোষণা করেন। তার যুক্তি ছিল, রেড অ্যালায়েন্স মেজরিটি পেয়েছে, তাই তারা কমিটি গঠনে সক্ষম। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, কর্পোরেট সদস্য এবং নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা এবং প্রথম সভায় সেক্রেটারি পদসহ অন্যান্য পদের নির্বাচন করা প্রয়োজন ছিল। সেক্রেটারি পদ ঘোষণার এই পদক্ষেপ অনেকে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছেন।
এছাড়া, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার টেম্পারিং এবং ব্যক্তি স্বার্থের জন্য এলায়েন্সের মেজরিটি দাবি সংবিধান লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট উদাহরণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। সদস্যদের অধিকার রক্ষায় এবং প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য রক্ষা করতে বেশ কিছু সদস্য এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার দাবি তুলেছেন।
সদস্যরা সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সেন্টারের ঐতিহ্য রক্ষা, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম বজায় রাখতে ভবিষ্যৎ নির্বাচনগুলোতে সংবিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা মেনে চলার দাবি জানানো হয়েছে।
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।