নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
ফতুল্লার কায়েমপুর এলাকায় অবস্থিত শহীদ তিতুমীর একাডেমির সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানোর নোটিশ দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর এই নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সহকর্মী শিক্ষকরা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযোগগুলোকে মিথ্যা দাবি করেছেন এবং শিক্ষককে বহালের দাবি তুলেছেন।
বিদ্যালয়টিতে ২০০১ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন জাহাঙ্গীর আলম। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে বিদ্যালয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের তিনি নিজের সন্তানের মতো দেখতেন এবং আন্তরিকভাবে পাঠদান করতেন বলে জানিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাকরি থেকে অবসরের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে— জাহাঙ্গীর আলমের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, পাঠদান অনিয়মিত হওয়া এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ। তবে নোটিশে এটিও উল্লেখ করা হয় যে তিনি দীর্ঘকাল সম্মান ও সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সাংবাদিকদের জানান, এভাবে হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত সন্দেহজনক। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘স্যারকে বিদ্যালয় থেকে সরানোর জন্য একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছিলো। তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কারণে তারা সফল হয়নি। অবশেষে এভাবে নোটিশ দিয়ে স্যারকে বিদায় জানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তারা আরও বলেন, “আমরা কোনোভাবেই এমন ষড়যন্ত্র মেনে নেব না। একজন গুণি শিক্ষককে এভাবে বিদায় দেওয়া যায় না।”
বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, জাহাঙ্গীর আলম গত কয়েক মাস ধরে অসুস্থ থাকায় প্রধান শিক্ষক তাকে ছুটি দিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও বিদ্যালয়ে ফেরার আগেই তাকে অবসরের নোটিশ দেওয়া হয়। তারা দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ বা পাঠদানে অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিউদ্দিন আহমাদ বলেন, “ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বাধ্য হয়েই তাকে অবসরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি শ্রেণিকক্ষে অনিয়মিত ছিলেন, মাঝেমধ্যে ক্লাস রেখে বাইরে চলে যেতেন, এমনকি বিদ্যালয়ের ওয়াশরুম ব্যাবহার না করে বাসায় চলে যেতেন। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতো।”
তিনি আরও দাবি করেন, “শিক্ষার্থীরা নিজেরাই অভিযোগ করেছে যে, মাঝে মাঝে তিনি অশ্রাব্য গালিগালাজ ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন।”
তবে প্রধান শিক্ষকের এমন বক্তব্য প্রতিবাদ করেন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের একাংশ। তারা এমন অভিযোগ মিথ্যা দাবী করেন। একপর্যায়ে তাদের দাবির মুখে প্রধান শিক্ষক একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন এবং ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এডভোকেট রাসেল বলেন, “আলম স্যার একজন ভালো শিক্ষক। আমি নিজেও তার শিক্ষার্থী ছিলাম। আমরা চাই তিনি সুস্থ হয়ে আবার বিদ্যালয়ে ফিরে আসুন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যদি অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে আমরা তাকে পুনর্বহাল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
একজন দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় শিক্ষককে ঘিরে এমন সিদ্ধান্তে ফতুল্লার শিক্ষাঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এখন সবার দৃষ্টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের দিকে— সেটিই নির্ধারণ করবে জাহাঙ্গীর আলমের ভবিষ্যৎ শিক্ষকতা জীবন।