প্রয়াত ফযলে রাব্বি মিয়া ডেপুটি স্পীকার ও এমপির বাইশ থেকে আরেক বাইশ কাহিনি ।
মোঃ আনছারুজ্জামান,স্টাফ রিপোর্টার।
গাইবান্ধার সাত বারের এমপি জনাব ফজলে রাব্বী মিয়ার স্টমাক থেকে প্রায় নয় ঘন্টার অপারেশনে তিন কেজি ওজনের ক্যানসার টিউমার সরিয়েছিল আমাদের সবার প্রিয় ডিএমসিয়ান সার্জন ডাক্তার খাদেম। উন্নত কেমোথেরাপির জন্যে তিনি গেলেন বোম্বে। সেখানে উন্নতি না হওয়ায় ডিএমসি কে- টুয়েন্টিনাইন ব্যাচের ডাক্তার মাসুদকে নিউইয়র্কে কল করেছিলেন ডেপুটি স্পিকার সাহেব,– “মুক বাঁচাও নয়কো মুক মেরে ফেলো।”
“একজন মুক্তিযোদ্ধা আমার মতো শহীদ পরিবারের আরেকজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে জীবন বাঁচানোর সাহায্য চাইছেন শুনে কোন কিছু ভাবনা চিন্তা না করেই বলে ফেললাম, চলে আসুন আমেরিকা, পারলে আজই আসুন।” বেদনার্ত ডাক্তার মাসুদ- আমার বন্ধু-সহপাঠী আজ কথাগুলি বলে যাচ্ছিলো আমাকে কিছুক্ষন আগে।
বললো, “দোস্ত, আশ্চর্য একটা অংক আছে ডেপুটি স্পিকারের মৃত্যুতে। উনি এসেছিলেন ২২শে অক্টোবর ২০২১ সনের বিকাল বেলা জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে, আমি তাঁকে হুইল চেয়ারে নিয়ে আসি বাসায়। ঠিক নয় মাসের মাথায় ২২শে জুলাই একই বিকেল বেলা সাড়ে চারটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন নিউইয়র্কে।”
বললাম, মাউন্ট সিনাইর মতো পৃথিবী খ্যাত হাসপাতালে নিয়ে কি চিকিৎসা দিয়েছিস তোরা! ওনার কি কোনো নিরাময় হয়েছিল?
মাসুদ জানালো, “ফজলে রাব্বী মিয়া আমার দাওয়াতে হুট করে চলে আসায় পরিমাণ মতো অর্থ নিয়ে আসতে পারেননি। ইনসিউরেন্স নেই তাই টাকা জমা দিতে হবে অগ্রিম,-৬৫ হাজার ডলার কম আছে। দলীয় নেতাদের ও পরিচিতজনদের কাছে ধার চাইলাম কেউ এগিয়ে এলোনা। আমি মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। আমেরিকায় শিক্ষকদের ক্রেডিট লিমিট খুব কম, মর্টগেজ দেয়ার পরে আর সেভিংস হয়না। আমার মন খারাপ দেখে প্রশ্ন করে আমার ইহুদী বস ডাক্তার বরিস ডেভিডভ পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরো ৬৫ হাজার ডলারের চেক দিয়ে বললেন, রোগী ভর্তি করে দাও আপাততঃ।
এই ইহুদীর কারণে পৌঁছার একদিন পরে ২৩ তারিখ ডেপুটি স্যারকে ভর্তি করা গেলো। চেক অবিশ্যি ক্যাশ করতে হয়নি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় সমাধান হয়েছিলো পেমেন্ট ইস্যু। চব্বিশ তারিখ আবার সার্জারী হলো সেই খাদেমের মতোই প্রায় ৯ ঘন্টা। কদিন পরে ইনফেকশন, ব্ল্যাক ডিসচার্জ ওউন্ড থেকে। নভেম্বর ৭ তারিখ আবার সার্জারি, এবার ভালো হয়ে গেলেন। ক্যানসার মার্কার- নিগেটিভ, পেটস্ক্যান- নিগেটিভ। তিনি সারাক্ষন বলতেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর আঠারো কোটি মানুষের দোয়ায় আল্লাহ আমাকে সুস্থ করে দেবেন ইনশাআল্লাহ।
দুমাস ভালই ছিলেন, দেশে আসতে চেয়েছিলেন, মাউন্ট সিনাই বললো যাবেন না, ফলোআপে থাকুন।
মে মাসে ধরা পড়লো সব অর্গানগুলিতে ক্যানসার সেল আবার হটাৎ ফিরে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে। ক্রিয়েটিনিন বাড়তে শুরু করলো। পরশু দিন দশ উঠলো, (স্বাভাবিক ১), কিডনি থেকে শুরু করে একে একে সব অর্গান ফেল, আল্লাহর কাছে ফিরে গেলেন তিনি।”
মাসুদ বললো “বন্ধু, ঘুমাতে পারিনা, একা থাকলেই সারাক্ষন ওনার কন্ঠ ভেসে আসে, ‘মুক বাঁচাও ডাক্তার! বড়ো ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। বেডে, হুইল চেয়ারে কখনো নামাজ ছাড়েন নি।
বুঝলি দোস্ত, আমার এখন মনে হচ্ছে কিসের পেছনে দৌড়ে মরি আমরা! আমাদের পেছনে সারাক্ষন মৃত্যু দৌড়ায়, অথচ একবারও পেছনে তাকিয়ে নিজের মৃত্যুর চেহারা দেখার কথা ভাবিনা। কিছু ভালো লাগে নারে! একটু থেমে বললো, পারলে আমার হয়ে ডেপুটি স্পিকার সাহেবের লাশ আনতে যাস। এইমাত্র বিদায় দিয়ে এসেছি। ২৫ তারিখ সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে ল্যান্ড করবে দুবাই হয়ে- ইকে ফ্লাইট নম্বর ফাইভ এইট টু।”
ভিডিও ফোন কেটে গেলো।
মাসুদের অনুভূতির কথা আল্লাহ এভাবে বলেছেন, “আমি বিধান দিয়েছি যে, মৃত্যু সব সময় তোমাদের মাঝে অবস্থান করবে।” সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৬০।
আল্লাহ আবার বলেন, ‘হে মানুষ! আমিই জীবন দান করি। আমিই মৃত্যু ঘটাই। আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে। যেদিন জমিন বিদীর্ণ হবে এবং মৃতরা উত্থিত হয়ে ছুটতে থাকবে, তখন তাদের সমবেত করা খুব সহজ একটি কাজ।’ –সূরা কাফ, আয়াত ৪৩-৪৪।
আল্লাহ তাঁর বান্দা ফজলে রাব্বী মিঞাকে ক্ষমা করুন, রহম করুন। মানুষের মৃত্যুর পরে এর চেয়ে বেশি চাওয়ার কোনো পথ আল্লাহ খোলা রাখেন নি। যা নেয়ার তা প্রতিটি মানুষ সঙ্গে করেই নিয়ে যায়, ভালো ও খারাপ আমলের দলিল ছাড়া অন্য কিছুই কারো সাথে যায় না।
Post Credit – আরিফুর রহমান ভাইয়ের স্ট্যাটাস।