পাইকগাছায় সিত্রাং’র প্রভাবে কৃষিতে জেলার সর্বোচ্চ ক্ষতি!
বি.সরকার, স্টাফ রিপোর্টার খুলনা।
খুলনার পাইকগাছার সুন্দরবন উপকূলীয় লোনা পানির রোদে পোড়া মানুষদের কাছে এক মুর্তিমান আতঙ্কের নাম “প্রাকৃতিক দুর্যোগ”। প্রায় প্রতি বছর সিডর, আইলা, মহসেন, ফণি, নার্গিস, তিতলি, বুলবুল, আমফান, ইয়াস ও সর্বশেষ সিত্রাং নামক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে এ জনপদে। বার বার গুড়িয়ে দেয় লাখো মানুষের একেকটি সোনালী
সকালের স্বপ্নের প্রত্যাশা। তবে সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলের পাইকগাছায় কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বৃষ্টির প্রভাবে জেলার সবোর্চ্চ মাছের ঘের, কাঁচা ঘর-বাড়ি ও কৃষি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে পাইকগাছায় ১১২টি মৎস্য ঘের, ২০৭ টি কাঁচা ঘর ও ১৮৭ হেক্টর জমির কৃষি ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।। তবে উপজেলায় এবারই প্রথম কোন প্রাকৃতিক দূযোর্গে সুরক্ষিত ছিল ওয়াপদার বেড়িবাঁধগুলো। খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মোঃ আমিরুল আজাদ জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে খুলনায় মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড
করা হয়েছে ২২৯ মিলিমিটার। এর মধ্যে রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২ মিলিমিটার এবং সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সিত্রাং এর প্রভাবে উপজেলায় সর্বোমোট প্রায় ১৮৭ হেক্টর জমির কৃষি ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। যার বেশির ভাগই আমন ফসল বলেও জানান তিনি। পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ টিপু সুলতান জানান, সিত্রাং’র প্রভাবে উপজেলার অন্তত ৮৩ জন চাষির ১১২টি মৎস্য ঘেরের প্রায় ৬.১ মেট্রিকটন মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে উপজেলায় গড়ইখালী, সোলাদানা ও লতা ইউনিয়নের বিভিন্ন মৎস্য ঘের তুলনামুলক বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। মূলত রোববার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অতি বৃষ্টি এবং পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। এছাড়া গড়ইখালী, সোলাদানা ও লতা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী মাছের ঘেরগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলেও দাবি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ টিপু সুলতানের। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, দুর্যোগে
আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ও কার্যত এর প্রভাব প্রতিফলিত না হওয়ায় সর্বসাধারণ দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়নি।
এব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব কুমার পাল জানান, খুলনা জেলায় শুধুমাত্র পাইকগাছা উপজেলায় মৎস্য ঘেরের বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার ৮৩ জন মৎস্যচাষির ১১২টি ঘেরের ৬.১ মেট্রিকটন মাছের ক্ষতি হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, সিত্রাং’র আগাম সতর্কবাতার্য় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বেশ আগেই সবোর্চ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। এছাড়া দূযোর্গের প্রভাবও কম ছিল তাই জান-মালের বিশেষ ক্ষতি হয়নি। এছাড়া এবারই প্রথম কোন প্রাকৃতিক দূযোর্গে উপজেলার বেড়িবাঁধের কোথাও ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটেনি। অতি বৃষ্টিতে কিছু এলাকার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।