নড়াইল মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে ডিসি অফিসের কর্মচারীদের হাতে দুই বীরমুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত, ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিলো কর্মচারীরা।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
মোঃ মামুন
নড়াইল মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী নাজির বাবর আলীসহ তার অনুসারী কয়েকজন কর্মচারীর হাতে নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট এস এ মতিন ও বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু লাঞ্ছিত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এসএ টিভির নড়াইল প্রতিনিধি আবদুস সাত্তার ভিডিও ধারণকালে ওই অফিসের কর্মচারীরা মোবাইলটি জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে যায় এবং ভিডিও ডিলিট করে দেয়।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নড়াইল জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সামনে এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু বলেন, শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে নড়াইল মুক্তি দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির শেষ দিকে জেলা শিল্পকলা চত্বরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট এসএ মতিন নাস্তার প্যাকেট আনতে যান। তখন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিসি অফিসের সহকারী নাজির বাবর আলীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়। তর্ক-বিতর্ককালে বাবরসহ তার অনুসারী ডিসি অফিসের কয়েকজন কর্মচারী এস্ মতিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তখন আমি এগিয়ে যাই। এরপর বাবর আলীসহ তার অনুসারীরা পুনরায় আমাদের ওপর চড়াও হয় এবং কয়েকবার তেড়ে আসে। এসময় উত্তেজিতভাবে আমাদের নিয়ে অশালীণ আচরণ করতে থাকে। ঘটনাস্থলে নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ফকরুল হাসান, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণা রায় সহ বেশ কয়েকজন ম্যাজিষ্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।’
বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন বলেন, ‘ ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা জীবন বাজি রেখে নড়াইলকে মুক্ত করেছিলাম। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে ডিসি অফিসের কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত হলাম। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু থাকতে পারে না।’
এদিকে এ ঘটনার সময় উপস্থিত এসএ টিভির নড়াইল প্রতিনিধি আবদুস সাত্তার ভিডিওধারণকালে ডিসি অফিসের কর্মচারীরা জোরপূর্বক তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছে।
সাংবাদিক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘ সহকারী নাজির বাবর আলীসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারী বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন ও সাইফুর রহমান হিলুর ওপর তেড়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ফকরুল হাসান ঠেকানোর চেষ্টা করেও নাজির আলী তোয়াক্কা না করে একাধিকবার হাত এগিয়ে নিয়ে যান এবং কেউ কেউ চেয়ার উচু করে মারতে যান। তখন পেশাগত কারনে আমি ভিডিও ধারণ করতে যাই। এসময় নড়াইলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৃষ্ণা রায় ভিডিও করতে বাধা দেয়। কিন্তু পেশাগত কারনে ্আমি ভিডিও ধারণ করতে থাকি। এক পর্যায়ে ডিসি অফিসের কয়েকজন কর্মচারী আমাকে জাপটে ধরে জোরপূর্বক হাত থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয়। এসময় আমি আমার সহকর্মীদের খবর দেই। আমার সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর ক্যামেরা মোবাইল ফেরত দিলেও ওই ঘটনাস্থলের ভিডিও এবং আমার গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য প্রোমের সব ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছে। আজ ১০ ডিসেম্বর আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার দিবস। মানবাধিকার দিবসে আমার পেশাগত অধিকার হরণ করা হয়েছে।’
এ দিকে ঘটনার পর মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারর্স ফোরাম নড়াইল জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধন চলাকালে বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এসএ মতিন ও বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু ঘটনা বর্ণনা করে বক্তব্য রাখেন।
নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল হক টুকু বলেন, ‘ মহান বিজয়ের মাসে নড়াইল মুক্ত দিবসে দুজন বীরমুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এসময় ভিডিও ধারণকালে আমাদের একজন সহকর্মীকের লাঞ্ছিত করে ক্যামেরা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরা সন্ধ্যায় জরুরীভাবে মিটিং করবো।’
নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ আমি বাইরে ছিলাম। নড়াইলে এসেছি। আলোচনার মাধ্যমে সন্তোষজনক সমাধানের জন্য সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে বসবো।