বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

নড়াইলে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের ৫০তম শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয়েছে|

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৭৯ বার পঠিত

নড়াইলে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের ৫০তম শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয়েছে|

মোঃ এনামুল হক নড়াইল জেলা প্রতিনিধি|

নড়াইল জেলার এক মহানায়ক স্বাধীনতা যুদ্ধের সূর্য্যসন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫০তম শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয়েছে|জন্মস্থান নড়াইলে তার নিজ গ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে|

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট ও নড়াইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে কোরআনখানি.র‌্যালি.স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ.রাষ্ট্রীয় সম্মাননা.গার্ড অব অনার.আলোচনা সভা.দোয়া মাহফিল ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে|

রবিবার ৫সেপ্টেম্বর ২০২১ইং সাল সকাল ১০টার দিকে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের বাস্তভিটায় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়| পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নড়াইল জেলা প্রশাসন| নড়াইল জেলা পরিষদ| পুলিশ প্রশাসন| বীর মুক্তিযোদ্ধা| সদর উপজেলা পরিষদ| বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট| বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়| বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন|

শ্রোদ্ধাঞ্জলির শেষে মহান এই বীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে পুলিশের বাহিনী রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করেন|

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার মিলনায়তনে এই বীরের জীবন ও কর্মের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়|তারপর দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়| মোনাজাত শেষে আনুমানিক ১৫০ জন অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়|

এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান| বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়|নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ফকরুল হাসান|অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানজিলা সিদ্দিকা| নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম| বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ছেলে শেখ মোস্তফা কামাল প্রমুখ|

১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ যশোরের শার্শা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখে যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন| যশোর শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়|

বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন| বর্তমান গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে “নূর মোহাম্মদ নগর”

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের পিতার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ|মাতার নাম মোসাৎ জেন্নাতুন্নেছা| বাল্যকালে তিনি পিতা মাতাকে হারিয়েছেন|লেখাপড়া করেছিলেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত|

১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস ইপিআর| তারপর বর্ডার গার্ড অব যোগদান করেন| দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭০ সালের ১০ই জুলাই মাসে বদলী যশোর সেক্টরে হয়েছিলেন| পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পদক পান|

১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নাম্বার সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেছিলেন| যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের সাহসী সন্তান নূর মোহাম্মদ|

এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নাম্বার সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর| এদের নেতৃত্বেও লড়েছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ|

৫ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়ে এলএমজি হাতে করে শত্রু পক্ষের সাথে যুদ্ধে গুলি চালিয়ে ছিলেন| হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙে যায়|তারপর ও গুলি বন্ধ করেন নাই|শক্রমুক্ত করার জন্য নিজের প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে ছিলেন|

১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখীন হয়ে যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন রণাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ|

যশোর জেলার শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়| বর্তমানে তার ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল ও তিন মেয়ে আছেন| গত বছর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা ইন্তেকাল করেন|

বীরের সম্মানার্থে নূর মোহাম্মদ নগরে সরকারী ব্যয় হয় ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা| বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে|

২০০৮ সালের ১৮ মার্চ মাসে কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত আবু ওসমান চৌধুরী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন| নূর মোহাম্মদের বাড়িতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে|

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নগরে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় এই বীরের নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়| একটি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ২০০৫ ইং সাল|

১৯৯৯ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির নিম্ন মাধ্যমিক স্তর ১১ বছর পর ২০১০ সালে এমপিওভুক্ত হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিও ভুক্ত হয় নাই|

বাংলাদেশের মানচিত্র লাল সবুজ পতাকা ও স্বাধীনবাংলার স্বাধীনতার জন্য বীরের মতন জীবন দিয়ে চলে গেছে যারা তাদেরকে কোটি কোটি বিনম্র শ্রোদ্ধার সাথে ছালাম নিবেদন করেন ডা.এনামুল হক ||

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..