এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ
মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জ যোগদানের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন প্রকার কার্যক্রম অব্যাহতভাবে করে যাচ্ছেন। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারিতে যোগ দিয়ে তিনি প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জকে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জবাসীর কল্যণে তিনি বিরামহীনভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তার এসকল কর্মকান্ডে তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ , রাজনৈতিক,ও অরাজনৈতিক সর্বমহলেই প্রশংসিত হচ্ছেন। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সামাজিক সাংস্কৃতিক সর্বমহলই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
সবশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে পেশাগত গাড়ি চালক ও হেলপারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং ইউনিফর্ম ও পরিচয়পত্র প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচির আওতায় গ্রিন আমব্রেলা প্রকল্পের বাস্তবায়নে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যা বিগত দিনে কেউ করেনি।
একই সাথে এদিন নারায়ণগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪ পরিবারের সদস্যদের কাছে ৫ লাখ করে ২০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসক চালক-হেলপারদের কল্যাণার্থে গ্রিন একাউন্ট নামে একটি কল্যাণ ফান্ড চালু করে প্রাথমিকভাবে ২ লক্ষ টাকা প্রদানের ঘোষণা দেন এবং সকল বিত্তবানকে শরীক হয়ে একটি নিরাপদ সড়ক গড়ার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিকেএমইএ সভাপতি, চেম্বার কমার্স প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি ড্রাইভার ও হেলপার, বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি, প্রেসক্লাব সভাপতি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
অনুষ্ঠানে হেলপার, সরকারি ও বেসরকারি পেশাদার চালক, বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন এর পক্ষ থেকে একজন করে প্রতিনিধি বক্তব্য প্রদান করেন। তারা বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের প্রত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এ উদ্যোগ তাদের পেশাগত নিরাপত্তা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক যোগদান দেয়ার পর থেকেই তিনি অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। তিনি যতদিন আমাদের নারায়ণগঞ্জে থাকবেন নারায়ণগঞ্জবাসী তার দ্বারা কল্যাণ পাবে।
বিকেএমইএর সহ সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, আমি জেলা প্রশাসন সহ এই আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং প্রতিশ্রæতি দিচ্ছি একজন শিল্প নেতা হিসেবে আমি সবসময় এ ধরনের ইতিবাচক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে পাশে থাকবো।
এমনিভাবে কেউ কেউ জেলা প্রশাসককে অঘোষিতভাবে নারায়ণগঞ্জ সকল আসনের জনপ্রতিনিধি উল্লেখ করেন। কারণ বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা যে সকল কাজে হাত দেননি কিংবা কোনো প্রয়োজন মনে করেননি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম নিজে স্বপ্রণোদিত হয়ে এসকল কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে এদিন অনুষ্ঠানে সকলেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাদের বক্তব্যের একটি অংশ জেলা প্রশাসকের প্রশংসা। সকলেই তাকে সাধুবাদ জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জ যোগদানের পর থেকেই কখনো গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন কর্মসূচীতে এক লাখ সবুজ পাতার বৃক্ষরোপন, ক্লিনে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে খাল খনন, জুলাই আগষ্ট শহীদদের স্মরণে দেশের প্রথম নারায়ণগঞ্জে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ নির্মাণ, বীর শহীদদের পরিবারদের আর্থিক প্রদান, তাদের স্মরণে বৃক্ষরোপন, সাইনবোর্ডে ‘গেইট অফ ডান্ডি’ নির্মাণ ঘোষণা, খেলাধুলা চাহিদা পূরণে কোচ খেলোয়াড়দের আর্থিক সহায়তা, কখনো পরিচ্ছন্নকর্মী কন্যা বিয়ে ও অসহায়দের সুবিধার্থে আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারায়ণগঞ্জ স্টেডিয়াম উন্নয়নে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ, কখনো ছুটে যায় ডেঙ্গু কিট ও আয়রন ট্যাবলেট নিয়ে হাসপাতালে, নবজাতকদের জন্য এনআইসিইউ চালু করা, চাদাঁবাজ সন্ত্রাসীদের আটক করে এক মাসের ডিটেশন প্রদান, পাসপোর্ট অফিসে দালালীতে কারাদন্ড, নিশ্চিত নিরাপদ খাদ্য প্রদানে মোবাইল কোর্ট এবং যানজট ও হকার মুক্ত নগর গড়ে তুলতে দফা দফা বৈঠক চলমান অব্যাহত রেখেছেন।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ফুটবল একাডেমীকে ফুটবল খেলার বুট ক্রয় সার্বিক খরচে জেলা পরিষদ থেকে ৭৮ হাজার টাকার চেক তুলে দেন ডিসি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
এর আগে গত বছর ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর জনপ্রতিনিধি শূণ্য হয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জ। ৫ আসনে হুইপ ও এমপিরা পলাতক হয়ে যায়। একই সাথে আওয়ামীলীগ সমর্থিত জেলা পরিষদের প্রশাসক, পৌরসভার মেয়র কাউন্সিলর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারও পলায়ন করেন। যার এরপরই ১৯ আগষ্ট থেকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। একই সাথে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানকে অপসারিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
তাদের দায়িত্বে সরকারের সচিব, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ইউএনও সহ সরকারি দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা পালন করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত রয়েছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। প্রায় সাড়ে সাত মাসের বেশি সময় ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বত্র স্থানে কর্মসূচী নিয়ে হাজির হয়েছেন। একই সাথে নারায়ণগঞ্জকে আবারো প্রাচ্যের ডান্ডি ফিরে আনতে বিভিন্ন দপ্তরে সাথে যোগাযোগ বহাল রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোগান্তি অপর নাম হলো যানজট ও ফুটপাত দখল। তিনি ইতোমধ্যে একাধিবার নাসিকের প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নিয়ে বৈঠক করে সমাধানের প্রচেস্টা করে যাচ্ছেন। সুযোগে বাস মালিকরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ভাড়া বৃদ্ধি করে নিলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোগান্তি কথা শুনে একদিন পরই বাস ভাড়া স্থগিত করে দেন জেলা প্রশাসক। এই নিয়ে এরই মধ্যে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচীতে এক লাখ বৃক্ষরোপন ও খাল পরিস্কারে আলোচিত রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। আগষ্টের শুরুতে ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির আওতায় শহরজুড়ে খাল পরিষ্কার ও খনন কার্যক্রম শুরু করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো জলাবদ্ধতা নিরসন এবং খালের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা। একই সাথে এই উদ্যোগকে স্থায়ীভাবে রূপ দেয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ডাস্টবিন নির্মাণ ও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।