নাগরপুর (টাঙ্গাইল)প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে স্ত্রী সন্তানের বিরুদ্বে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন স্বামী। উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। মামলার আসামীরা হলেন স্ত্রী পরীভানু (৩৮) বড় কন্যা পারভীন আক্তার (২২) সহ পাঁচ জন। একটি মামলায় স্ত্রী পরীভানু বড় মেয়ে পারভিন আক্তার ও জামাতা মো. জাহিদুল (২৯) ১১ দিন কারাভোগ করেন। মামলার বাদী ওই গ্রামের মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে মঙ্গল মিয়া ওরফে মংলা (৪২) ।
পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, নাগরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের তনু মিয়ার কন্যার সাথে প্রায় ২৮ বছর আগে গয়হাটা ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের সেকান্দার আলীর ছেলের সাথে ইসলামিক শরিয়ত মতে বিবাহ হয়। বিয়ের পর সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মঙ্গল ওরফে মংলা সৌদি পারি জমায়। দীর্ঘ প্রায় ২২ বছরের প্রবাসী জীবনে ছুটি নিয়ে কয়েক বার দেশে আসেন। এরি মধ্যে তাদের মাঝে তিনটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। প্রবাসে থাকা অবস্থায় মঙ্গল মিয়া স্ত্রী সন্তানের সুখের জন্য আবাদি জমি ক্রয় সহ পুরাতন বাড়ী শ্যামপুরে একটি পাকা ঘর ও নাগরপুর দুয়াজানী মৌজায় একটি বাড়ী নির্মান করেন। সংসারে যখন পুরোপুরি স্বচ্ছলতা ফিরে আসে ঠিক সেই মুহুর্তেই তার আপন ভাইদের কুদৃষ্টি পরে যায়। বিদেশে থাকা অবস্থায় পরিবার ও এলাকার শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফোনের মাধ্যমে ভাইদের চক্রান্তের কথা জানতে পেরে মঙ্গল দেশে চলে আসে। দেশে আসলে বাকী পাঁচ ভাই মিলে রশিদের নেতৃত্বে মঙ্গলের স্ত্রী সন্তানের নামে বিভিন্ন কুকথা বলে কান বারি করার চেষ্টা করে। সেই সাথে মঙ্গলের কোন ছেলে সন্তান না থাকায় সম্পত্তি ভাইদের নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। মঙ্গল ভাইদের হিন উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ২০১৮ সালে স্ত্রী সন্তানের ভবিষৎ চিন্তা করে নাগরপুরের দুয়াজানীর বাড়ী সহ কিছু আবাদী জমি স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে হেবা দলিল করে দেন। একথা জানার পর থেকে ভাইয়েরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। ভাইদের কারণে মঙ্গল দেশে থাকতে না পেরে আবার বিদেশে চলে যান। রশিদ বড় ভাইয়ের স্ত্রীর নামে এলাকায় বিভিন্ন অসামাজিক কথাবার্তা প্রচার করতে থাকে। পরবর্তীতে ভাইদের কথা বিশ্বাস করে সে এক বছরের মধ্যেই দেশে চলে আসে। দেশে ফিরে স্ত্রী সন্তানের সাথে দেখা না করেই ভাইদের সাথে বাড়ী চলে যায়। ছোট ভাই রশিদ রাত দিন সম্পত্তির লোভে তাকে মানুষিক ভাবে নির্যাতন করে স্ত্রী পরীভানুর উপর বিষিয়ে তোলে। মঙ্গল সম্পত্তি ফিরিয়ে নিতে ভাইদের নিয়ে স্ত্রী পরীভানুর সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। তাদের অত্যাচার ও নির্যাতন সইতে না পেরে পরীভানু কিছু সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে রাজি হন। রশিদ পুরো সম্পত্তির লোভে বড় ভাই মঙ্গলকে এমন ভাবে ভয় দেখাতে থাকে যার ফলে সে স্ত্রীর কাছ থেকে সম্পত্তি ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। স্বামী ও দেবরদের অত্যাচারে তিন কন্যা সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে পরীভানু। ভাইদের পরামর্শে মংলা স্ত্রী, বড় মেয়ে ও জামাতা সহ পাঁচ জন কে আসামী করে ০২-১০-২০১৯ সালে টাঙ্গাইল যুগ্ন জেলা জজ ৪র্থ আদালতে দলিল পন্ডনের জন্য একটি মামলা দায়ের করে (মামলা নং ৩৮/২০১৯)। পরবর্তীতে উল্লেখিত আসামীদের নামে ৬-১১-২০১৯ সালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে জাল দলিলের আরেকটি মামলা দায়ের করে (মামলা নং ২২২/২০১৯)। মামলা দেয়ার আগে মঙ্গল ছোট ভাই রশিদ কে সাথে নিয়ে স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করে । এলাকা বাসী রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে নাগরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। কিছুটা সুস্থ্য হয়ে পরীভানু সন্তানদের নিয়ে নাগরপুরের দুয়াজানী বাসায় চলে আসে। বাদী মঙ্গল মিয়া ওরফে মংলা বিদেশ চলে যায়। বিদেশ থাকা অবস্থায় গয়হাটার শ্যামপুর গ্রামের বাড়ীতে কেউ না থাকার সুযোগে রশিদ অন্য ভাইদের সাথে নিয়ে বাড়ীর কেচিগেট ভেঙ্গে ঘরের সকল মালামাল লুট করে। গত ২৫-১১-২০১৯ তারিখে এ ঘটনা নিয়ে পরীভানু নাগরপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে অঘ্যত কারণে এসআই সিরাজুল ইসলাম কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
দুই মাস পর মংলা পূর্নরায় দেশে ফিরে এসে ভাইদের নিয়ে দুয়াজানীর বাড়ী দখলের জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ০৩-০৫-২০২১ তারিখ সকালের দিকে মংলা ও রশিদ দলবল নিয়ে এসে দুয়াজানীর বাসার কেচিগেট ভেঙ্গে বাসা দখলের চেষ্টা করে। ভয় পেয়ে পরীভানুর শিশু কন্যা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশের সাহায্য চান। ৯৯৯ এর অভিযোগ পেয়ে নাগরপুর থানার এসআই ইমরান ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই দিনই নাগরপুর থানায় আরো একটি অভিযোগ দায়ের করে পরীভানু। এএসআই নুরুল ইসলাম অভিযোগ পেয়ে ঘটনা স্থল তদন্ত করেন। ঘটনার প্রায় ১ মাস অতিবাহীত হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি।
অসহায় পরীভানু জানান, আমি স্বামী সন্তান নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সুখে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলাম। আমার স্বামী বিদেশ থাকা অবস্থায় দুজনে পরামর্শ করে সাফ কবলায় আমার স্বামীর নামে কিছু আবাদী জমি সহ একটি বাড়ী ক্রয় করি। আমাদের সংসার জীবনে তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কোন ছেলে সন্তান না থাকায় স্বামীর অন্য ভাইদের চোখ পড়ে যায় আমাদের সম্পত্তির উপর। স্বামী ভাইদের উদেশ্য বুঝতে পেরে নিজের ক্রয়কৃত দুয়াজানীর বাড়ী সহ কিছু আবাদী জমি আমার নামে নাগরপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে হেবা দলিল করে দেন। আর এই সম্পত্তির কারণেই তচনচ হয়ে যায় আমার সাজানো সংসার। স্বামীর দেয়া মামলায় বড় মেয়ে ও মেয়ের জামাই সহ আমাকে জেল খাটতে হয়। এ লজ্জার কথা আমি কাকে বলবো। এখনও তারা প্রতিনিয়ত আমাকে খুন এবং সন্তানদের গুম করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি সন্তানদের নিয়ে আতংকের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগীতা কামনা করছি।