নওগাঁর মহাদেবপুরে সরকারি অনুষ্ঠানের
মঞ্চে গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারিরা
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার আয়োজনে আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালনের অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাদের সাথে মঞ্চে কয়েকজন বিতর্কীত ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রদের মিছিলে হামলাকারি, লাঠি হাতে মহড়া দেয়া ও ফ্যাসিস্ট কর্মকান্ডে জড়িত তিনজনকে মঞ্চে বসতে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা নিষিদ্ধ আওয়ামী দোসরদের পরিকল্পিতভাবে পূনর্বাসনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ ফ্যাসিবাদবিরোধীদের। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে মঞ্চ তৈরি করে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মঞ্চে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা না হলেও ওই তিনজনকে বসতে দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে দূর্যোগকালীন উদ্ধার অভিযান দেখানোর জন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও স্থানীয়দের তেমন কাউকে চোখে পড়েনি। ফলে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের মূল লক্ষ্যই ব্যহত হয়েছে।
মঞ্চে থাকা বিতর্কীতদের একজন আয়নুল হোসেন গত ডামি নির্বাচনে নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে নৌকার প্রার্থী সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্রীর মহাদেবপুর সর্বমঙ্গলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি। গতবছর ৫ আগস্ট সকালে ছাত্রজনতার মিছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সামনে গেলে তিন ব্যক্তিসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিলকারিদের চিহ্নিত করতে ভিডিও ধারণ ও মিছিলে হামলা করে। এই অভিযোগে ইতিমধ্যেই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মোখলেছুর রহমানকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থানা পুলিশ ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার করে। গত তিন সপ্তাহ ধরে সে জেলহাজতে রয়েছে। অপর দুজনের মধ্যে একজন এই আইনুল। ফ্যাসিবাদের আমলে সে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে একের পর এক চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভূয়া মৎস্যজীবী সেজে অসংখ্য সরকারি জলমহাল স্বল্পমূল্যে ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে সাবলিজ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার চাঁদাবাজীর কয়েকটি কলরেকর্ড সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে।
মঞ্চে বসা দ্বিতীয় জন বরুণ মজুমদার যুবলীগের সদস্য। গত ডামি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর অঘোষিত প্রেসসচিব হিসেবে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে বিতর্কীত কর্মকান্ড পরিচালনা করে। বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছদ্মবেশে মুসলিম নারীদের সাথে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন, একাধিক ধর্ষণ মামলা দায়ের, মানববন্ধনও হয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট সকাল পর্যন্ত লাঠি হাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে তাকে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
অপর ব্যক্তি আককাস আলী নওগাঁ-৩ আসনের সাবেক এমপি মরহুম ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করে। এই পরিচয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবজীতে লিপ্ত হয়। তার বিরুদ্ধে থানায় অসংখ্য জিডি এন্ট্রি হয়। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চাঁদাবাজীর নগদ টাকাসহ হাতে নাতে ধরা পড়ে দীর্ঘ কারাবাস করে। সে উপজেলা আওয়ামী লীগরে সভাপতি সাবেক এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদারের প্রতিবেসী। ছাত্রজনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে বিরোধীতা করে ফেসবুক ও অনলাইনে ফ্যাসিবাদের পক্ষে ব্যাপক এক্টিভিজম চালায়। ৫ আগস্টের পরেও সে এসব বিতর্কীত কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে। গত ২৪ মার্চ দুপুরে উপজেলা খাদ্যগুদামে চাঁদাবাজী করতে গেলে স্থানীয়রা আককাস আলী ও বরুণ মজুমদারকে কয়েক ঘন্টা আটক করে রাখে।
এরা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারি একটি মহল এরকম ১০ জন বিতর্কীত ব্যক্তির আমলনামা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দেয়। এই ১০ জনের মধ্যে আইনুল হোসেন, বরুণ মজুমদার ও আককাস আলীর নামও রয়েছে। এছাড়াও , চাঁন্দাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁন্দাশ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ, ফ্যাসিবাদী আমলের নিয়োগ বাণিজ্যের মূল হোতা মোঃ হারুনুর রশিদ , সাবেক উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান শ্রীঃ অনুকূল শাহা(বুদু) থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ কাউছার আলী, সহ সভাপতি মোঃ মোহায়মিনুল ইসলাম(দুলাল), সহ সভাপতি মোঃ ওয়াসিম আলী(কথিত সাংবাদিক)।
রনাইল ওয়াড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আজিজার রহমান ও তার পুত্র ফ্যাসিবাদের সক্রিয় দোসর মোঃ শাহাদত হোসেন।
কুঞ্জবন ঈদগাঁ পাড়া গ্রামের ফাশিষ্ট মোকলেছুর রহমান টাইগার এর পুত্র মোঃ সাইদুর রহমান সহ অগ্যাত নামা আরো শতাধিক ক্যাডার বাহিনী লাঠি, লোহার রড, আগ্নে অস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র হাতে ছাত্র জনতার মিছিলে হামলা চালায়।
দেশে যখন নিষিদ্ধ আওয়ামী দোসরদের ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার চলছে এরকম পরিস্থিতিতে এই ফাসিবাদের প্রত্যক্ষ দোসরদের আটক না করে সরকারি অনুষ্ঠানে একদম মঞ্চে দেখে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মহাদেবপুরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের দূর্নীতি ও অনিয়ম ঢাকতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসিত করতে ও ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রজনতার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করাতে এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এসব আওয়ামী দোসর কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি তাদের।
বিষয়টি জানতে অনুষ্ঠানের আয়োজক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মোবাইলফোন নম্বরে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।