নওগাঁয় গরু চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারপিট, থানায় মামলা
মোঃ মিজানুর রহমান মানিক ক্রাইম রিপোর্টার নওগাঁঃ
নওগাঁয় গরু চুরির বিষয়কে কেন্দ্র করে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৬/০৩/২৪ তারিখে জেলার সদর উপজেলার ভীমপুর এলাকার কনইল গ্রামে এঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ আবুল হোসেন(৫৫) মোহাম্মদ বাবুল হোসেন (৫০) বাচ্চু হোসেন(৪৫) পিতা মৃত আফজাল হোসেন, মোহাম্মদ রানা(৩০) মোহাম্মদ বাদল(২৫) উভয় পিতা মোঃ বাবুল হোসেন, মোহাম্মদ রায়হান(২১) পিতা মোহাম্মদ বাচ্চু হোসেন, মোসা: হ্যাপি বেগম(৫০) স্বামী মোহাম্মদ আবুল হোসেন, মোসাম্মৎ আঞ্জুয়ারা বেগম (৪৫) স্বামী মোহাম্মদ আবুল হোসেন, মোছা: জেসমিন (২৫)স্বামী মোহাম্মদ রানা, মোসাম্মৎ ফরিদা বেগম(৪০) স্বামী মোহাম্মদ বাচ্চু হোসেন, মোছা: মুন্নি আক্তার (২০) স্বামী মোহাম্মদ বাদল, মোছা: কল্পনা আক্তার(২৫) স্বামী মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন, সর্বসাং কনইল পশ্চিমপাড়া, হাঁসাইগাড়ী থানা ও জেলা নওগাঁ এর বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী রেজাউল করিম এবং আমজাদ হোসেন। গরু চুরির বিষয়কে কেন্দ্র করে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করায় রাগে, ক্ষোভে অভিযুক্তরা হত্যার উদ্দেশ্যে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনের উপর অতর্কীত এবং দলবদ্ধভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালান বলে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করেন বাদী রেজাউল করিম। তিনি একই এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে। অপরদিকে আমজাদ হোসেন তার গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরির বিষয়টি নিয়ে পৃথক মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে । তবে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদেরই দিন কাটছে নানা আতঙ্কে। তথ্য সংগ্রহকালে মিথ্যা মামলায় হয়রানিরও অভিযোগ করেন তারা। এব্যপারে স্থানীয় অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি জানান, মারামারির ঘটনা এবং গরু চুরির ঘটনাও সঠিক। গত কিছু দিনের ব্যবধানে ওই একই এলাকা থেকে তিনটি গরু চুরি হলেও স্থানীয় নিজাম উদ্দিন নামের এক কৃষক চুরি হওয়া গরু ফেরত পেয়েছেন। তবে বাকি দুইটি গরু এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে গরু চুরির ঘটনায় অভিযুক্তরা জড়িত রয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকে সম্মতি জানালেও কেউ কেউ উত্তর দিতে রাজী হননি। তবে মারামারির ঘটনায় উভয় পক্ষই আহত হন বলে জানান তারা।
এব্যপারে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমাদের গরু চুরি হওয়ায় আমরা প্রথমে ভীমপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ করি, তিনটি গরু চুরি হয় আমাদের একই এলাকা থেকে। একটি গরু উদ্ধার হয় এবং আমরা চোরকে চিহ্নিত করতে পারায় পরে আদালতে মামলা করি। সেই কারনেই আমাদের উপর তারা এমন সন্ত্রাসী হামলা চালায়। দেশীয় অস্ত্র, লাঠী, লোহার রডসহ দলবদ্ধ ভাবে আমাদের আক্রমণ করে। এতে আমাদের পরিবারের বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত গুরুতর যখম হলে আমরা নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। তাদের এমন সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে এবং নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছি মাত্র। তবে সেটি ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করে তারা আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। এবং বিভিন্ন ভাবে ভয় ভীতি ও প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছেন তারা, যার জন্য আমাদের প্রতিটা দিন কাটছে নানা আতঙ্কে। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান দাবী করেন তারা।
এব্যপারে লেজামুদ্দিন নামের এক স্থানীয় কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার গোয়াল ঘর থেকে চুরি হওয়া গরুটি পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এবং সেই সাথে গরু চুরির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে পারি। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন বলে জানান তিনি।
উদ্ধারকৃত গাভীটির সাথে গ্রেফতারকৃত দুই আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করেন নওগাঁ সদর থানা পুলিশ। এস আই জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত আসামীদ্বয়ের জবানবন্দি ফৌঃকা বিঃ ১৬৪ ধারা মােতাবেক লিপিবন্ধ করার আবেদন পত্রে উল্লেখ্য যে
গ্রেফতারকৃত আসামী ১। মােঃ সােহাগ হােসেন (২৪)পিতা- মােঃ ফজলু শেখ সাং-পানিশাইল ও ২। মােঃ মামুন সিদ্দিক প্রামানিক(২৮)পিতা-মােঃ আশরাফ আলী সং-জালালপুর উভয় থানা-নওগাঁ সদর,জেলা-নওগাঁদ্বয়কে চালান ফরােয়াডিং সহ প্রযােজনীয় পুলিশ ক্কট্রের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ পূর্বক জানাইতেছি যে,বাদী মােঃ লেজাম মন্ডল এজাহার দায়ের করেন,তাহার বাড়ির পালিত ০১টি বােকনা গরু, ১টি গাভী গরু ও ১টি ছােট বাছুর গরু সহ গােয়াল ঘরে বাঁধিয়া ইং ২২/১২/২০২৩ তারিখ রাত্রী অনুমান ২৩.০০ ঘটিকার সময় ঘুমাইয়া পড়েন। অতপর বাদী ইং-২৩/১২/২০২৩ তারিখ রাত্রি অনুমান ০১.৩০ ঘটিকার সময় প্রকৃতির ডাকে ঘুম থেকে উঠিয়া,তাহার বাড়ীর মূল গেটের দরজার তালা ভাঙ্গ দেখিয়া গােয়াল ঘরে গিয়ে দেখিতে পান, ০১টি বোকনা গরু বয়স ০৪ বছর, গায়ের রং-লাল, মাথায় দুইটি ছােট শিং আছে, যাহার মুল্য অনুমান ৯০,০০০/-(নব্ই হাজার) টাকা অজ্ঞাতনামা চোর বা চোরেরা চুরি করিয়া লইয়া গিয়াছে। মামলাটি তদন্তকালে,এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী সন্দিগ্ধ ১নং আসামী মােঃ সােহাগ হােসেনকে ইং২৩/১২/২০২৩ তারিখ ১৮.৩৫ ঘটিকার সময় তাহার নিজ বাড়ী হইতে আটক করিয়া তাৎক্ষনিক জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে উক্ত আসামী জানায়,বাদীর বর্নিত গরুটি সে নিজে ও তার সহযােগী গ্রেফতারকৃত আসামী মােঃ মামুন সিদ্দিক প্রামানিক(২৮) এবং পলাতক আসামী মো: ছানােয়ার হাসেন(২৫)পিতা-মােঃ বাবুল সাং-কনইল থানা জেলা-নওগাঁগন যােগসাজসে চুরি করিয়া একটি ছােট পিকআপ যােগে আসামী মােঃ মামুন সিদ্দিক প্রামানিকের বাড়ীতে নিয়ে রাখিয়াছে। উক্ত আসামীর প্রদত্ত তথ্য মােতাবেক আসামী
মােঃ মামুন সিদ্দিক প্রামানিককে ইং-২৩/১২/২০২৩ তারিখ ২০.১০ ঘটিকায় মহাদেবপুর থানাধীন স্বরসতীপুর এলাকা হইতে গ্রেফতার এবং উক্ত অসামীর দেখানোমতে ,ঐ তারিখ ২১.৩০ ঘটিকার সময় তাহার বাড়ীর শয়নকক্ষ হইতে বাদীর চুরি যাওয়া গরুটি উদ্ধার করা হয়। মামলাটি তদস্তকালে,বর্নিত আসামীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে এবং মামাটি তদন্যাধীন আছে। উল্লেখ্য যে, বাদীর গরু চুরি করার সময় ব্যবহৃত পিকআপের চালক ছিল সন্দিগ্ধ গ্রেফতারকৃত আসামী মােঃ সোহাগ হােসেন এবং পিকআপটি উক্ত আসামীকে গ্রেফতারের সময় তাহার হেফাজত হইতে আটক করা হইয়াছে।
এমতাবস্থায়, মামলাটির সুষ্ঠ তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে গ্রেফতারকৃত আসামীদয়ের জবানবন্দি ফৌ র্কাঃ বিঃ ১৬৪ধারা মাে্তাবেক লিপিবন্ধ করা একান্ত প্রয়োেজন। অতএব,বিনীত প্রার্থনা মামলাটির সুষ্ঠ তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রেরিত আসামীদ্বয়ের জবানবন্দি ফৌঃকাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মাতাবেক লিপিবন্ধ করার সদয় আদেশ দানে মর্জি হয়।
অভিযুক্তদের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
এব্যপারে মামলার তদন্ত অফিসার সাব ইন্সপেক্টর মোঃ নুরুন্নবীর সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মারামারির ঘটনায় উভয় পক্ষেরই লোকজন আহত হয়েছেন এবং তারা নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।