তালতলীতে বিদ্রোহীদের কারণে নৌকার প্রার্থীদের পরাজয়ের শঙ্কা
মোঃ ইফতেখার মোরশেদ রিমন , বরগুনা জেলা ব্যুরো প্রধান।
শেষ ধাপের ইউপি নির্বাচনে বরগুনার তালতলী উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ১৫ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।নির্বাচনে ছয় ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে নৌকার চারটি ইউপিতে নৌকার পরাজয়ের আশঙ্কা করছেন নেতা কর্মীরা।
নেতা কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে দলের নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেয়ার কারনেই বারবার বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি দলের পদধারী নেতারা বিদ্রোহ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নেতা কর্মীরা উভয় দিকে বিভক্ত হওয়ার কারণে নৌকার জয় নিয়ে শঙ্কিত দলীয় নেতাকর্মীরা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ রেজিউলেশন করে জেলা আওয়ামীলীগ কাছে সুপারিশ পত্র পাঠিয়েছেন।
তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মু: তৌফিকউজ্জামান তনু ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে ও তিনি মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হয়ে ছিলেন। ছোটবগী ইউনিয়নে তৌফিকউজ্জামান তনু সহ তিনজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী একজন,অপর চেয়ারম্যান প্রার্থীর কেনো দলীয় পরিচয় নাই । বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল হোসেন (আনারস)। বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুইজন জেলা আওয়ামী লীগে এক প্রভাবশালী নেতার খুব ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
তৌফিক উজ্জামানের মত তালতলী উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের মোকাবেলা করতে হবে। ছোটবগী ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হোসেন বলেন দল (আওয়ামীলীগ) খাওয়ায় না ,পারায় না, এই দল দিয়ে আমার কি হবে। বহিষ্কার করলে করবে। এছাড়া নানা কারণে আমি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছি ।
পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ.রাজ্জাক। এই ইউনিয়নে রাজ্জাকসহ চেয়ারম্যান প্রার্থী চার জন।এরমধ্যে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী। তিনি এই ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে সভাপতি মো.আবু জাফর খোকন (আনারস) ।
আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আ. রাজ্জাক বলেন,বিদ্রোহী প্রার্থীকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও পোষ্টার ব্যানার ছিড়ে ফেলছে। এলাকায় তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে।
বিদ্রোহী প্রার্থী পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু জাফর খোকন বলেন,আমাকে বহিস্কারের ভয় দেখানো হচ্ছে। বহিস্কারের ক্ষমতা উপজেলা আওয়ামী লীগের নাই,তারা জেলা আওয়ামীলীগের কাছে বহিস্কারের সুপারিশ করতে পারে জেলা আওয়ামীলীগ তা কেন্দ্রে পাঠাতে পারে। কেন্দ্র থেকে আমাকে বহিষ্কার করতে পারে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবো।
নিশানবাড়িয়া ইউনিয়রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী (ঘোড়া )।
দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগেরর সহসভাপতি কামরুজ্জামান বাচ্চু। বিদ্রোহী প্রার্থী দুলাল ফরাজাী জনসমর্থন শূন্যের কোঠায়। তিনি কালো টাকা দিয়ে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার অভিযোগ বাচ্চুর।
সোনাকাটা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সুলতান ফরাজী। তার বিপরিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কবির আকন্দ। বিদ্রোহী প্রার্থী কবির আকন্দ বলেন,তালিকায় আমার নাম এক নম্বরে ছিলো,আমার মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তার কারণে আমি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।
ছোটবগী ইউনিয়নের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মু: তৌফিকউজামান তনু বলেন,দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচন করার এতো শক্তি কোথায় পায় তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করে দলীয় নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয় জানতে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির বলেন,দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বহিস্কার করার জন্য উপজেলা থেকে জেলা আওয়ামীলীগের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে এ সুপারিশপত্র পাঠালে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিবে।
এ প্রসঙ্গে বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার( টুকু) বলেন, তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করে জেলা আওয়ামীলীগের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বলেন শুনছি ,আমরা দুই-এক দিনের মধ্যে চিঠি পেয়ে যাবো। চিঠি পেলে তা দ্রুত কেন্দ্রেীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হবে।