ডা,মুরাদের বিরুদ্ধে ৫ জেলায় মামলা।
স্টাফ রিপোর্টার
বিতর্কিত মন্তব্য করা এবং ঢাকাই সিনেমার এক নায়িকার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথনে অশালীন ভাষা ব্যবহার ও ধর্ষণের হুমকির ঘটনায় মন্ত্রিত্ব হারানো ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে পাঁচ জেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাঁচটি মামলা হয়েছে।
আজ রোববার ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীতে এসব মামলা করেন পাঁচ আইনজীবী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে এসব মামলা করেন তারা।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী। মামলার অপর আসামি হলেন, মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানান, মামলাটি রোববার দাখিল হলেও বিচারক না থাকায় আগামীকাল সোমবার শুনানি হবে।
চট্টগ্রাম : একই অভিযোগে মুরাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলায় কথিত ইউটিউবার মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকেও (নাহিদ রেইন্স) আসামি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ার মামলার আবেদন করেন। জানা গেছে, মামলার আবেদনের পর শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারক অতিরিক্ত জেলা জজ এস. কে. এম. তোফায়েল হাসান মামলাটি আদেশের জন্য রেখেছেন।
অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ার বলেন, জাইমা রহমানের বিরুদ্ধে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের অশ্লীল মন্তব্য ও তাকে প্ররোচিত করার ঘটনায় ইউটিবার মহিউদ্দিন হেলালের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইবুনালে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
সিলেট : ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে সিলেটে মামলা করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তানভীর আক্তার খান এ মামলা করেন। মামলায় মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকেও আসামি করা হয়েছে।
এদিকে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে খুলনাতেও মামলার আবেদন করা হয়েছে। এ মামলায়ও আসামি করা হয়েছে নাহিদকে। দুপুরে খুলনা সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের খুলনা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোল্লা গোলাম মওলা এ আবেদন করেন। আগামী মঙ্গলবার আদালতে আবেদনের শুনানি হবে।
এ ছাড়া মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতেও মামলা হয়েছে। এতে ভার্চুয়াল টকশোর উপস্থাপক মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকেও আসামি করা হয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন।
এসব মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল ও নারীবিদ্বেষী ভিডিও প্রকাশ ও প্রচার করেন। গত ১ ডিসেম্বর আসামিরা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে তাদের অপমান ও হেয়প্রতিপন্ন করেন। যা সার্বিকভাবে জিয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নারী সমাজের জন্য মানহানিকর এবং অপমানজনক।
বিভিন্ন টকশো ও অনুষ্ঠানে নানা বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও ঢাকাই সিনেমার এক নায়িকার সঙ্গে অডিও ফাঁসের ঘটনায় ডা. মুরাদকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি পদত্যাগ করেন। একইসঙ্গে জামালপুর আওয়ামী লীগেরও পদ হারান। পদত্যাগের পর গত ৯ ডিসেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটসের ফ্লাইটে দুবাই হয়ে কানাডার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু তিনি সেদেশে প্রবেশ করতে পারেননি। শেষমেশ আজ সন্ধ্যার দিকে তিনি ঢাকায় ফিরেছেন।
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এ রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।