ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ শিক্ষার্থীর শিক্ষক-কর্মচারী ১৮ জন
জসিম উদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ের সব মাদরাসায় একযোগে শুরু হয়েছে অর্ধবার্ষিক
পরীক্ষা। পরীক্ষায় মাদরাসায় সব ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও
ভরনিয়া দাখিল মাদরাসায় পরীক্ষা দিচ্ছেন মাত্র ৭ জন!
সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে রাণীশংকৈল উপজেলার দূরত্ব
প্রায় ৪০ কিলোমিটার। আর উপজেলা শহর থেকে মাদরাসার দূরত্ব প্রায় ১৫
কিলোমিটার। ১৯৬৪ সালে ভরনিয়া দাখিল মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আর
এমপিওভূক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। একসময় নামডাক থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন পরিণত
হয়েছে ৭ শিক্ষার্থীর পাঠশালায়। শিক্ষক, কর্মচারীও আছেন ১৮ জন। নিয়মিত
বেতনও নিচ্ছেন তারা। ইবতেদায়ি থেকে দাখিল পর্যন্ত রয়েছে দশটি শ্রেণি
কক্ষ। কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৪৫ জন। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র
সম্পূর্ণ ভিন্ন।
অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন ৬ষ্ঠ শ্রেণির
১ জন, ৭ম শ্রেণির ১ জন এবং নবম শ্রেণির ৫ জন। পরীক্ষা চলাকালে দেখা গেছে,
শিক্ষকরা অফিসে বসে আড্ডা মারছেন, আর ৭ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন বই
খুলে!
এদিকে, শিক্ষার্থী না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন
নির্মাণের বরাদ্দও পেয়েছে। মাদরাসার নামে ১৫ বিঘা আবাদি জমি থাকলেও
সেগুলো দেওয়া হয়েছে বন্ধক!
ভরনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, ‘মাদরাসায় নতুন সুপার আসার পর থেকে
মাদরাসার অবস্থা করুন। ছেলেমেয়েরা মেট্রিক পাস করতে পারে না, সব ফেল করে।
প্রতিষ্ঠানের অনেক পুরানো গাছ ছিল, সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। মাদারাসায়
এখন কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই। মাদরাসার জমি আছে সেগুলোও বন্ধক দেওয়া হয়েছে।
একই গ্রামের বাবুল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকরা ঠিকভাবে ডিউটি পালন করে না,
ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের জীবন গড়াতে অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘যেখানে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি
বাড়াতে কারও কোনো পদক্ষেপ নাই। সেখানে কর্মচারী নিয়োগে লাখ লাখ টাকার
বাণিজ্য এবং মাদরাসার জন্য ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন বরাদ্দ হয়
কিভাবে?’
মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য আব্দুল করিম বলেন, ‘কমিটির
কোনো মিটিং হয় না। ছাত্র-ছাত্রী এখন ৬-৭ জন। শিক্ষকরা সময়মতো আসেন না। ৬০
জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। এই টাকা কোথায় যায়, কে পায়? একদিন মাদরাসায়
গিয়ে দেখি ৫ জন শিক্ষক এসেছে, এর মধ্যে একজন ঘুমাচ্ছে।’
ভরনিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আতাউর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের আসার
জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ-কামের জন্য ছাত্ররা আসছে না। করোনার কারণে
ছাত্র-ছাত্রীরা আসে নাই। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা
করছি।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন, ‘স্থানীয় জনগণের
অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখি কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই।
কয়েকজন শিক্ষক আছেন, সুপারও ছিল না। একটি ক্লাস রুমে প্রবেশ করে দেখি
সেখানে ছাগল ও বাদুরের মল। যা আমাকে হতবাক করেছে। পড়ালেখাও হয় না, বিষয়টি
আমি মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাতে অবগত করেছি।’ এই পরিণতির জন্য তিনি
শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতাকে দায়ি করেন।
রাণীশংকৈল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৈয়ব আলী মাদারাসায়
শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি যোগদান করার
প্রায় এক মাস হলো। এসে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য
শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে মতবিনিময় করেছি। কিন্তু মাদরাসা
পর্যায় তা করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতি উত্তরণের উপায়
খোঁজা হবে। প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে যদি অনিয়ম পাওয়া যায়. তাহলে
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’