ঠাকুরগাঁওয়ে ৫৫ বছর ধরে যেভাবে তৈরি হচ্ছে আখের গুড়
জসিম উদ্দিন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
পাশাপাশি কয়েকটি চুলা। চুলার ওপর টগবগ করে ফুটছে আখের রস। রস লাল হয়ে এলে
এক চুলা থেকে চলে যাচ্ছে আরেক চুলায়। এভাবেই তৈরি হচ্ছে আখের গুড়। এক দুই
বছর নয়, ৫৫ বছর ধরে গ্রামাঞ্চলের মানুষ এভাবেই গুড় তৈরি করে জীবিকা
নির্বাহ করছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের কিছু গ্রামে প্রাকৃতিক
পদ্ধতিতে আখের রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। বছরের চার মাস আখের রস দিয়ে গুড়
তৈরি করেন তারা। তৈরি গুড় বাজারে বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার
চালান গ্রামের অধিকাংশ পরিবার।
জানা গেছে, মাঠ থেকে আখ আনার পর সেগুলো ভাঙানো হয় পাওয়ার কেশার মেশিনে।
মেশিনের এক পাশ থেকে বের হয় আখের রস আর অপর পাশ দিয়ে বের হয় উচ্ছিষ্ট। আখ
থেকে বের হওয়া রস নিয়ে যেতে হয় চুলায় রাখা কড়াইয়ে। চুলায় রস রেখে ৫-৬
ঘণ্টা জ্বালানোর পর পাওয়া যায় গুড়।
গুড় বানানো হামী আসাদুল্লাহ বলেন, আমরা এখন আর সুগার মিলে আখ দেইনা।
সেখানে আখ দিলে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়। সময়মতো আখ সুগার মিল না নেওয়ায়
আমাদের আখগুলো শুকিয়ে যায়। শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ওজন কমে যায়। এতে করে
আমাদের পুঁজি থাকে না। আর টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন
হতে হয়।
আরেক কৃষক ইব্রাহীম বলেন, আমরা পাওয়ার কেশারের মাধ্যমে গুড় তৈরি করি।
আলাদা কোনো শ্রমিক লাগে না, পরিবারের সব সদস্য মিলে আমরা কাজটা করি। দিনে
২০০ কেজি পর্যন্ত গুড় তৈরি করা হয়। যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চালাই।
কৃষক শমসের আলী বলেন, আমরা ২-৩ মাস গুড় তৈরি করি। ১১ মণ আখে এক মণ গুড়
হয়। প্রতি কেজিতে ৮-১০ টাকা লাভ হয়। যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চলে।
আলী আকবর বলেন, আমরা ৫ কুইন্টাল গুড় নিজে তৈরি করলে দাম পাই ৫০০০-৬০০০
টাকা। আর আখ সেন্টারে দিলে দাম পাই ১৫০০ টাকা। এই টাকা তোলার জন্য আবার
পার্সেন্টেজ দিতে হয়। তাই আমরা সুগার মিলের সেন্টারে আখ দেই না।
দীর্ঘদিন ধরে গুড় তৈরি করে আসছেন আলম হোসেন। তিনি বলেন, আমরা নিজেই গুড়
তৈরি করি। এটি অনেক সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়। বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসে এটি
আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। এমনকি দেশের বাইরেও আমাদের এই গুড় যায়।
জসিম উদ্দিন ইতি
ঠাকুরগাঁও