মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে দেশের সব নদীর পানি 

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১১৩ বার পঠিত

ঠাকুরগাঁওয়ে দেশের সব নদীর পানি

 

জসীম উদ্দিন ইতি ঠাকুরগাঁও

বাংলাদেশের প্রায় সব নদীর পানি সংগৃহীত আছে ঠাকুরগাঁওয়ে। এখানকার লোকায়ন জীবনবৈচিত্র্য জাদুঘরের নদী গ্যালারিতে আছে বাংলাদেশের নানা অঞ্চলের ২০০ নদীর পানি।

 

ঠাকুরগাঁওয়ের বেসরকারি সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) উদ্যোগে সদর উপজেলার পূর্ব আকচায় গড়ে উঠেছে এই জাদুঘর।

 

মধ্যযুগে নাকি বাংলা অঞ্চলে ছিল প্রায় ১ হাজার ৩০০ নদী, এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ২৩০টি। হাজার নদীর বিলুপ্ত হওয়ার কুপ্রভাব পড়েছে নদীকেন্দ্রিক জীবন, প্রকৃতি, গাছপালাসহ সার্বিক জীবনবৈচিত্র্যে। হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নদীগুলোর চিহ্ন ধরে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের লোকায়ন জীবনবৈচিত্র্য জাদুঘর।

 

দেশের বেশ কিছু জায়গার নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে, সেই নদীর নাম, জায়গার নাম ও সময়টি লিখে রাখা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এই নদী গ্যালারিটি।

 

‘নদী গ্যালারি’ নামে তাদের যে ম্যাগাজিনটি আছে, সেখানকার তথ্যমতে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য ও তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা ৪০৫টি। তবে এই ৪০৫টির মধ্যে সারা বছর প্রবহমান থাকে এমন নদীর সংখ্যা ২৩০ এবং বাকিগুলোতে পানি থাকে শুধু গ্রীস্ম ও বর্ষাকালে।

 

সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, গত শতাব্দীর ষাটের দশকেও সাড়ে ৭০০ নদী ছিল এই ভূখণ্ডে। ৫০ বছরে বিলীন হয়েছে ৫২০টি নদী! তবে এই সংখ্যাগুলো মূল নদীর। শাখা-প্রশাখাসহ হিসাব করলে মোট নদ-নদীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮০০, যা এই জনপদে ২৪ হাজার ১৪০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে রয়েছে।

 

নদী গ্যালারিতে প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারত, উত্তর মহাসাগর, দক্ষিণ মহাসাগরসহ সাতটি সমুদ্রের বালি আছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় ক্ষীণ বা খরস্রোতা অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকা নদীগুলোর পানি সংরক্ষণ করে অন্তত খাতা-কলমে নদীগুলোকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

 

লোকায়ন জাদুঘরের ‘নদী গ্যালারি’র প্রকল্প সমন্বয়ক আইনুল হক জানান, গ্যালারিতে নদী ও নদীকে ঘিরে জীবনযাপনের নানা উপাদান, যেমন মাছ শিকারের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রাচীন হাতিয়ার, নৌকা, পাল, দাঁড়, গুণ এসব আছে। নদীবিধৌত কৃষি কর্মকাণ্ডের যন্ত্রপাতিও অন্যান্য গ্যালারিতে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য আছে।

 

নদী মানুষের জীবন-জীবিকা-সংস্কৃতি-সুখ-দুঃখের স্মারক। যদি ৫০ বছর আগেই কেউ এ উদ্যোগ নিতেন তবে বিলীন হওয়া নদীগুলোর পানি আজও সংরক্ষিত থাকত। নদী গ্যালারিতে এ সময়ের নদীগুলোর পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে, যার অনেকগুলোই হয়তো কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে কিন্তু তাদের ইতিহাস বহন করবে এই সংরক্ষিত পানি।

 

কেবল নদীর জলই নয়, এই নদীকেন্দ্রিক জনপদের জীবনবৈচিত্র্য ধারণকারী বিভিন্ন সামগ্রীও এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে রয়েছে, নৌকা, নদীভিত্তিক উৎসব নৌকাবাইচ, নৌকায় চরে গাওয়া ভাটিয়ালি গান ও এসব গানে ব্যবহৃত একতারাসহ যন্ত্রপাতি, বন্যা, চর, নদীতে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা জলজ উদ্ভিদ, নদীর মাছ, বর্ষা, নদীকেন্দ্রিক পাখি ইত্যাদি। যাঁরা এখানে আসেন, তাঁরা অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যান। সারা বাংলাদেশের নদীর জল একসঙ্গে, এ তো যা-তা ব্যাপার নয়!

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..