ঠাকুরগাঁওয়ে তাল গাছ লাগিয়ে রেকর্ড গড়ার চেষ্টা ইমামের
জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে-উঁকি মারে আকাশে’। এই কবিতাটি মনে করিয়ে দেয় আকাশমুখী এই গাছটির কথা। যদিও আজকাল গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না অগণতি তাল গাছের সারি। সময়ের পরিক্রমায় তালগাছের সংখ্যাও কমে গিয়ে আজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৭নং চিলারং ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের ৬৭ বছরের ইমাম মোঃখোরশেদ আলী। আর তাল গাছ লাগিয়ে জেলা, উপজেলা ও রংপুর বিভাগে প্রথম হলেও এবার তিনি তাল গাছ লাগিয়ে সারাদেশেসহ বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চান।
এই পরিবেশ সচেতন মানুষটি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর রোপন করেছেন ৫ হাজার তালগাছ। বর্তমানে তার পরিচর্যায় প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি তালগাছ রয়েছে।
ইমাম মোঃখোরশেদ আলী পেশায় একজন পল্লী-চিকিৎসক।গত২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে চিলারং ইউনিয়নের রেলঘুন্টি থেকে আখানগড় রেল ষ্টেশন পর্যন্ত বীজ রোপণ করা সাড়ে ৩ হাজার গাছ একটু দৃশ্যমান। এই গাছ রোপণ করতে গিয়ে তিনি তার পৈতৃক কৃষিজমি বিক্রি করেছন। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। তালের আঁটি সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাল বীজ সংগ্রহ
করতে এতে অনেক শ্রম ও শ্রমিক লেগেছে।তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৭নং চিলারং ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পল্লীবিদ্যূৎ বাজার থেকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাদসূকা ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং কাদসূকা ব্রীজ থেকে চৌরঙ্গী বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের দু’ধারে এ মহাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি টাকার হিসাব প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ইমাম মোঃখোরশেদ আলী বলেন, মানুষের চলার পথে টাকা-পয়সা বড় কথা নয়। মানুষের মধ্যে স্মৃতি হয়ে থাকতে চাই।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত ৩-৪ বছর ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে ও রাস্তার পাশে তাল বীজ রোপণ করেছি। নিয়মিত গাছ পরিচর্যার জন্য তিনি পাহাড়াদার রেখেছেন।তিনি আরও বলেন,প্রতি বছর রাস্তায় ৫ হাজার করে তাল বীজ রোপণ করেছি। এ কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পরিবেশের ভারসাম্য
রক্ষায় তাল বীজ রোপণে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।আমার ইচ্ছে এই বর্ষায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১০টি করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিনা মূল্যে রোপণের জন্য বিতরণ করব। এ লক্ষ্যে প্রায় ৩০ হাজার গাছের চারা
প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সবাইকে কমপক্ষে পাঁচটি করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণের জন্য আবেদন করছি। সেইসঙ্গে সরকারিভাবে বেশি বেশি গাছের চারা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান তিনি। তাছাড়া তাল গাছ রোপন করে প্রতি বছর যে হাজার হাজার মানুষ বর্জপাতে মারা যায় সেটাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান,খোরশেদ আলীর কাজ সারাদেশে অনন্য নজির হয়ে থাকবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মনসুরুল আজিজ বলেন, যত বেশি গাছ লাগানো হবে তত বেশি প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে। দেশের প্রায় সর্বত্রই তাল গাছসহ বড় বড় গাছের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এতে করে বজ্রপাতে মানুষের প্রাণহানি বাড়ছে। তাই গাছ লাগান এবং সুস্থ থাকুন। আর বেশি বেশি করে তাল গাছ লাগালে ফল ও পুষ্টি চাহিদা যেমন পুরণ হবে তেমনি হাজার হাজার মানুষ বর্জপাতে মারা যায় সেই প্রাণ হানিও কমানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
এমন মহৎ উদ্যোগ নেওয়ায় ইমাম মোঃখোরশেদ আলীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার ডিসি মোঃমাহবুবুর রহমান,এছাড়াও জেলা পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা
বলেন, এ রকম শ্রম দিয়ে দেশের সেবা করার মতো মানুষের আজ খুবই অভাব।ইমাম মোঃখোরশেদ আলীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
জসীম উদ্দিন ইতি
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
০১৭৫১০৭৯৮২৩