ঠাকুরগাঁওয়ে উদ্বোধনের পর থেকেই পরিত্যক্ত গ্রোয়ার্স মার্কেট
জসিম উদ্দিন ইতি
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জেলায় কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির নির্দিষ্ট কোনো
পাইকারি বাজার নাই। কৃষি পণ্য সরাসরি বিক্রির লক্ষ্যে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে
জেলায় ৬টি গ্রোয়ার্স মার্কেট (কৃষি বাজার) নির্মিত হয়। তবে দীর্ঘ ১৪ বছর
পেরিয়ে গেলেও ওই গ্রোয়ার্স মার্কেটগুলিতে কেনাবেচা না হওয়ায় পরিত্যক্ত
হয়ে পড়ে আছে বেশ কয়েকটি মার্কেট। মার্কেটগুলো অনেকবার চালুর উদ্যোগ নেয়া
হলেও চালু করা সম্ভব হয়নি পুরোদমে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ঠাকুগাঁও জেলার ৮০ ভাগ মানুষই সরাসরি কৃষি কাজের
উপর নির্ভরশীল। এ জেলায় সব ফসলই কম-বেশি উৎপাদিত হয়। জেলায় যে পরিমাণ
কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয় কৃষকরা সে পরিমাণ মূল্য পায় না। ঠাকুরগাঁও সদর
উপজেলার মাদারগঞ্জ মার্কেট থেকে এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পয়সা আয় হয়নি। অথচ
প্রত্যেকটি দোকান ঘর দখল করে আছেন অসাধু মহল। এতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ
কোনো খোঁজ খবর রাখেনি। তাদের যেন কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এ অবস্থায় সরকার
অনেক রাজস্ব হারাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের মার্কেটিং অফিসার রতন কুমার রায় জানান,
২০০৭ সালে এনসিডিপির আওতায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলায় ৬টি গ্রোয়ার্স
মার্কেট (কৃষি বাজার) নির্মাণ করে জেলা মাকেটিং অধিদপ্তর। এর মধ্যে ছোট
খোচাবাড়ী, লোহাগাড়া, মাদারগঞ্জ, কাতিহার, কালমেঘ, যাদুরানী হাটের
মার্কেট। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে বাজারগুলো অযত্ন আর অবহেলায় পরে
থাকছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সদর উপজেলার মাদারগঞ্জের মার্কেট। এ
মার্কেট থেকে কোনো আয় হয়নি।
অন্যদিকে পীরগঞ্জ উপজেলার লোহাগাড়া মার্কেট থেকে আয় হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার
৪৮০ টাকা, রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার হাটে আয় হয়েছে ৫০ হাজার ৭৮৫ টাকা,
হরিপুর উপজেলার যাদুরানী বাজার থেকে আয় হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩১৭ টাকা ও
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কালমেঘ মার্কেট থেকে আয় হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩০ টাকা।
মাদারগঞ্জ কৃষি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব কয়টি দোকান দখল অবস্থায়
রয়েছে। এতে মুদি দোকান ও বসত বাড়ি নির্মান করা হয়েছে। দোকনগুলো দখল করে
রয়েছেন তোফাজ্জল দোকান মালিক সফুরা বেগম, রুবেল (ভাঙ্গারী) দোকান, শামিম
(কাঁচামাল), জহির (টেইলার্স), আফজাল (ভাঙ্গারী), মকলেসুর মেম্বার
(গদিঘর), জলিল (কাঁচামাল ও ফল), বাঠু (ধান চাল) ব্যবসা, সেলিম
(ভাঙ্গারী), প্রশিন্ধর (খর ব্যবসায়ি), আশরাফুল (গরু ও মুরগির মাংস),
হারুন (ঔষুধ) এর দোকান দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে এলেও কোনো ভাড়া প্রদান করে না।
সদর উপজেলার খোচাবাড়ি এলাকার কৃষক মোমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, কার্তিক
চন্দ্র রায়সহ অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, এখানকার গ্রোয়ার্স মার্কেটটি
(কৃষি বাজার) বর্তমানে ধংসের পথে। উদ্বোধনের পর থেকে এই অবস্থাতেই পড়ে
আছে। সরকরের পক্ষ থেকেও চালুর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তবে এই সুযোগে
গ্রোয়াস মার্কেটের আশে পাশে অনেক মার্কেট দিব্বি চালু হয়ে চলছে।
একই এলাকার কৃষক মনোয়ার হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মার্কেটগুলি
সংরক্ষণ এবং চালুর উদ্যোগ নেয়া হলে বাজার বসিয়ে কৃষকেরা লাভবান হতে
পারবে।
নারগুনের বোচাপুকুরের ভোক্তা আবু সায়েদসহ কয়েজন জানান, বাজারে যে সকল
কাঁচাবাজার আমরা ক্রয় করছি সেগুলো পাইকারদের কাছ থেকে অনেক বেশি দামে
কিনতে হচ্ছে। যা কিনা কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করলে ক্রয়মূল্য অনেক কম হতো।
ঠাকুরগাঁওবাসীর দাবি প্রয়োজনীয় সংখ্যক গুদাম, হিমাগার তৈরি করে ধান-চাল,
গম-ভুট্টা, শস্যাদিসহ তরিতরকারি, ফল ফলাদি এবং শাক সবজি ওই মার্কেটগুলি
চালুর মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হোক। তাহলে সাধারণ ভোক্তা কম ক্রয়মূল্যে
সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করতে পারবে।
জসীম উদ্দিন ইতি
ঠাকুরগাঁও