জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় একটি দাখিল মাদ্রাসায় অবৈধভাবে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ধনতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার। অবৈধভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় চলতি বছরের গত ১৬ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিষ্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা আলাউল কবির। এই অভিযোগ পত্রে ৬৫ জন স্থানীয় বাসিন্দার স্বাক্ষর রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, গ্রামবাসীর অনেক দাতার অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ১৯৬৩ সালে ধনতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসাটি স্থাপিত হয়। এরপর থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার পর কাজ করছিলেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে নজরুল ইসলাম সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আজ অবধি অপকৌশলের মাধ্যমে নজরুল ইসলাম ঐ মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আমিরুল ইসলামকে ম্যানেজ করে সভাপতি নজরুল ইসলাম ঐ পদটি দখল করে একক কর্তৃত্ব চলাচ্ছেন। ঐ মাদ্রাসায় সুপারিনটেনডেন্ট ও সভাপতি যোগসাজশে ২০২১ সালে ২ জন কর্মচারী দুর্নীতি ও বাণিজ্যের করে নিয়োগও দিয়েছেন। এছাড়াও সভাপতি তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে ও সুপারিনটেনডেন্ট তার বোনের ছেলে ভাগিনাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
এদিকে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মাদ্রাসায় নতুন কমিটি গঠনের জন্য চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে বিধি বহির্ভুতভাবে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের সম্মতি ও ভোট ছাড়াই গোপনে একটি পকেট কমিটি গঠন করে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধিনে প্রেরণ করেছেন সুপারিনটেনডেন্ট আমিরুল ইসলাম ও সভাপতি নজরুল ইসলাম।
এরআগেও গোপনে কমিটি গঠন করা হলে গত ২০২০ সালের ০৩ মার্চ স্থানীয় ও অভিভাবকেরা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
মাদ্রাসায় অবৈধ পন্থায় ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম উদ্দীন বলেন, সভাপতি হওয়ার পর সুপারিনটেনডেন্টকে ম্যানেজ করে মাদ্রাসায় একক কর্তৃত্ব তৈরি করেছে নজরুল ইসলাম। সরকারের নিময়বহির্ভুতভাবে গোপনে কমিটি গঠন করে সেটি বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। আমরা এই অবৈধ কমিটি মানি না। আমরা চাই সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হোক।
মাদ্রাসা বোর্ডে অভিযোগকারী আলাউল কবির বলেন, কমিটি গঠন, নিয়োগ বাণিজ্যসহ মাদ্রাসার বিভিন্ন বিষয়বস্তু মাদ্রাসার সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সুপারিনটেনডেন্ট আমিরুল ইসলামকে দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে। কিন্তু তারা আমাদের কথার কর্ণপাত করছে না; নিজের ইচ্ছে মত যা ইচ্ছে তাই করছে। অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য করছে এবং গোপনে পকেট কমিটি গঠন করার পায়তারা করছে। এতে করে মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার মান খারাপের পথে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছি। আমিসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের দাবি- সরকারের নীতিমালা ও নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসাটির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হোক।
ধনতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আমিরুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম সম্পাদিত হচ্ছে। এছাড়া আমি আর আপনাদেরকে কিছু বলতে পারবো না এবং আমি কোন তথ্য দিতে পারবো না।
মাদ্রাসার সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, সভাপতি হওয়ার পর আমি মাদ্রাসার অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। আর এতে একটি পক্ষের সহ্য হচ্ছে না। আর এখানে অর্থের বিনিময়ে কোন নিয়োগ বাণিজ্য হয়নি। এমনকি ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য নিময় অনুযায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তফসীল ঘোষণা করেছিলেন; আমি সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছি। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বি কোন প্রার্থী না থাকায় কমিটি গঠন করে সেই তালিকা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। আর এখন যারা অভিযোগ করছে সেগুলো মিথ্যে, সেসব অভিযোগের সত্যতা নেই।
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী তফসীল ঘোষণার পর ধনতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম করা হয়নি। আর শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু বোর্ডে অভিযোগ দেয়া হয়েছে, এখন বোর্ড নির্দেশনা দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জসিম উদ্দিন ইতি
০১৭৫১০৭৯৮২৩
ঠাকুরগাঁও