জুড়ীতে বাগান গুলোতে শোভা পাচ্ছে আদা লেবু ও মাল্টা কৃষকের মুখে হাসি
জালালুর রহমান, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের জুড়ীতে উপজেলার লাঠিটিলা বনবিভাগ ও স্থানীয় বিভিন্ন আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পাহাড়ি টিলায় সারিবদ্ধ গাছের ডালে ডালে দোলছে এক ফসলী ও বারোমাসী বিভিন্ন জাতের আদা লেবু। এ অঞ্চলের আদা লেবুর স্বাদ ভালো হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশ ও বিদেশে। পাহাড়ী টিলাগুলোতে কমলা, বাতাবী লেবু-এক, বাতাবী লেবু-দুই, আদা লেবুসহ লেবু জাতীয় ফসল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। লেবু জাতীয় ফসল চাষ এসব এলাকার জনবসতিদের পেশায় পরিণত হয়ে উঠেছে। অনেকেই লেবু জাতীয় ফসল চাষের মধ্যদিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বছরই এক একটি বাগান থেকে লাখ লাখ টাকার ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়। এবারে খরা থাকায় আদা লেবুর ফলন তেমন ভলো হয়নাই। অন্যান্য বছরের মতো আকারও বড় হয়নি। আদা লেবুসহ লেবুজাতীয় ফসলের ফুল আসার আগে থেকেই দেখা দিয়েছিল তীব্র খরা। খরায় পানি সেচের কোন সুযোগ সুবিধা না থাকায় চাষীরা ছিল শঙ্কায়। তবে কৃষিবিদরা পানির বোতলে ছিদ্র করে গাছের গোড়ায় বেঁধে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চাষীদের। পানির বোতল ছিদ্র করে গাছের গোড়ায় রাখলে অনেকটাই পানির অভাব পূরণ হবে। এতে সেচের অভাবে গাছ মারা যাবে না, ফলনও মোটামুটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জানা গেছে, আদা একটি লেবু জাতীয় ফসল। এটি মাছ ও মাংস রান্নায় সাধারণত বেশ উপযোগী। মাছ ও মাংস রান্নায় স্বাদ মনোমুগ্ধকর হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশ ও বিদেশে। পাইকারী ক্রেতারা লাঠিটিলা থেকে আদা লেবু সংগ্রহ করে রাজধানী ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যায়। আবার অনেকেই বিদেশে থেকে ফিরে আদা লেবুর খোঁজে ছুটে আসছে, অনেকে বিদেশে আত্মীয় স্বজনদের বিভিন্ন ভাবে পাঠান বলে জানা গেছে। এতে কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪০ হেক্টর জমিতে লেবু জাতীয় ২ হাজার ২৫০টি বাগান রয়েছে। তন্মধ্যে বেশি ভাগ বাগান রয়েছে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লাঠিটিলা বন্য এলাকায়। কৃষি বিভাগের লেবু জাতীয় ফসল সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের কে প্রশিক্ষণ, সার ও চারা প্রদান এবং স্প্রে মেশিন প্রদানের মাধ্যমে নতুন নতুন বাগান সৃজন করা হয়েছে। শুকনা ছড়া গ্রামের চাষী রইছ উদ্দিন বলেন, এবারে আদা লেবুর ফলন ভালো হয়নাই। জরিছড়া গ্রামের চাষী কোকিল মিয়া জানান, ফুল আসার সময়ে খরা ছিল সেচ দেয়ার নেই কোন ব্যবস্থা। ফলে এবারে আদার ভালো ফলন হয়নি। আকারও ছোট সঠিক সময়ে সেঁচ দিতে পারলে বাম্পার ফলন পাওয়া যেতো।
জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল আলম খাঁন এ প্রতিবেদক কে জানান, জুড়ীর কমলা ও আদা লেবুর সুনাম রয়েছে দেশ বিদেশে। তিনি বলেন, এবারে ফুল আসার আগে থেকেই খরা ছিল। সরকারি ভাবে সেচের জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোন সুযোগ সুবিধা নেই। পানির অভাব পূরণ করতে আমরা চাষীদের পানির বোতল ছিদ্র করে গাছের গোড়ায় রাখার পরামর্শ দিয়েছি। এতে একেবারে ফুল ঝরে যাওয়ার চেয়ে কিছুটা রক্ষা হয়।
জেলার জুড়ী উপজেলার একাধিক আঁকাবাকা টিলায় আবাদ হয়েছে সবুজ সুস্বাদু ও মিষ্টি মাল্টা। খরচ কম হওয়ায় ও আবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় মাল্টা চাষে কৃষকরা আগ্রহী। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ২১ হেক্টর জমিতে মাল্টার বাগান তৈরী হয়েছে। উল্লেখ্য গত বছরে ছিল ১৮ হেক্টর। এবারে মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮৬ টন। উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে আবাদ হচ্ছে মাল্টার বাগান। ফুলতলা, পূর্বজুড়ী, সাগরনাল, গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে ফলন বেশি হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লালছড়া, হায়াছড়া, ডোমাবাড়ী, কচুরগুলসহ বেশ কয়েকটি বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। বারী-এক জাতের মাল্টা সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ার ফলে চাহিদা ব্যাপক। মাল্টা চাষি মো: খালেদ উদ্দিন বলেন, আমি মাল্টা বাগান তৈরী করেছি। সরকার থেকে সার সহ সকল ধরণের সহযোগিতা পেয়েছি। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত বাগান দেখেছেন। ডোমাবাড়ী গ্রামের সফিক উদ্দিন বলেন, সরকারি ভাবে ১০ শতাংশ জমিতে ৩০ টি গাছের একটি প্রদর্শনী পেয়েছেন। গাছের বয়স এখন তিন বছর হয়েছে চলতি বছর প্রতিটি গাছে প্রায় ২৫ থেকে ৬৫ টি করে ফল এসেছে। গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে মাল্টা বাগানের সংখ্যা ৪৭টি। এই এলাকায় উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জানা গেছে মাল্টার ফলন খুবই ভালো হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে মাল্টা ফলে কালার আসতেছে। পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে ছোট বড় বাগান প্রায় ১০ হেক্টর বনভূমিতে মাল্টা বাগান রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু বাগানে মাল্টা উৎপাদন শুরু হয়েছে। জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো: মাহমুদুল আলম খাঁন বলেন, লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে মাল্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। শুকনো মৌসুমে মাল্টার উৎপাদন বাড়াতে গাছের পরিচর্চায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। এই প্রযুক্তিতে পানি ও সার একসাথে দেওয়া যাবে ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে। তিনি জানান, যারা মাল্টা চাষ করেছে তাদের ফলন ভালো হয়েছে।