চালুর পরদিনই মাড়াই বন্ধ, বিপাকে আখ চাষিরা!
জসিম উদ্দিন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
একমাত্র ভারীশিল্প চিনিকলটি এ বছর আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হতে না হতেই বন্ধ
হয়ে গেছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে প্রতিষ্ঠানটি এখন বন্ধ রয়েছে। ফলে আখ
নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সেতাবগঞ্জ, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও সহ তিন জেলার চাষিরা।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও চিনিকল ঘুরে দেখা গেছে, গাড়িতে
করে মাড়াইয়ের জন্য আখ নিয়ে লাইন ধরে চিনিকলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন চাষিরা।
তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষ কোনো আখ মাড়াইয়ের জন্য নিচ্ছেনা। ফলে অনেক চাষি বসে
বসে লোকসানের প্রহর গুনছেন। অনেকে আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে চিনিকল
সংলগ্নমাঠে গাড়ি থেকে আখ ফেলে দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
জেলার রহিমানপুর এলাকার আখ চাষি ফয়েজ উদ্দীন বলেন, ‘আমি এবার ৮ একর জমিতে
আখ চাষ করেছি। এ বছর চিনিকলে আখ দেওয়ার অনুমতিও আছে আমার কাছে। চিনিকলে
দুই গাড়ি আখ নিয়ে এসেছি মাড়াইয়ের জন্য। এসে দেখি আখ নিচ্ছেনা। কর্তৃপক্ষ
বলছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আখ মাড়াই বন্ধ রয়েছে দুদিন ধরে।’
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
এটাই স্বাভাবিক।’ যদি আগে থেকে মিল কর্তৃপক্ষ মাইকিং করতো তাহলে আমাদের
আখ নিয়ে এত কান্নাকাটি করতে হতোনা। আমরা ক্ষেত থেকে আখ মাড়াইয়ের জন্য
মিলে আনতাম না।’
অপর আখচাষি নুরুজ্জামান গোলাপ বলেন, ‘আমি ২০ একর জমিতে আখ চাষ করেছি। এত
পরিমাণ আখ চাষ করে আমি বিপাকে পড়েছি এখন। কৃষকদের এ বছর ভালোই লোকসান
হবে। এত লোকসান গুনতে থাকলে এক সময় কোনো কৃষকই আর আখ চাষ করবে না ‘
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘গত ২৪
ডিসেম্বর পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ের ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ
মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মাড়াই কাজ উদ্বোধনের পরদিন ভোর
থেকে চিনিকলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর প্রতিদিন দুই এক ঘণ্টা করে
চিনিকল চললেও বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। এখন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মিলটি
আর চলছেনা। ফলে মিলে আখ মাড়াই কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ আছে। সমস্যার সমাধান
করার চেষ্টা চলছে। সমস্যার বিষয়টি কৃষকদের জানাতে সোমবার সকাল থেকে
মাইকিং করা হচ্ছে।’
রাষ্ট্রয়াত্ব শিল্প রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের জেলা আহ্বায়ক মাহাবুব আলম
রুবেল বলেন, ‘১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ঠাকুরগাঁও চিনিকল। এরপর থেকে আজ
অবদি মিলটির যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন করা হয়নি। মিল কর্তৃপক্ষ আখ চাষিদের
আখ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করার কথা বললেও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের দিকে তেমন
কোন জোড়ালো ভূমিকা নেই। ফলে কৃষকরা এর কুফল ভোগ করছেন। মাড়াই না হওয়ায় আখ
শুকিয়ে যাচ্ছে। লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। এমন চলতে থাকলে এই মিলটিও
বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে।’
থাকলে এই মিলটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে।’
জসিম উদ্দিন ইতি