রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের বাহা উৎসব পালন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩
  • ৭৫ বার পঠিত

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের বাহা উৎসব পালন
মোঃ আনছারুজ্জামান, রংপুর বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ নিজস্ব ঐতিহ্যে নাচ-গানে বরণ করলেন ঋতুরাজ বসন্তকে। শনিবার (১১ মার্চ) গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে বাহা পরবে মেতে ওঠে সাঁওতাল নারী-পুরুষ। ‘সাঁওতালদের ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষায় চাই, রাষ্ট্রিয় ও সামাজিক উদ্যোগ’ এই শ্লোগানে ব্রিটিশ হাইকমিশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও আইইডি’র সহযোগিতায় অবলম্বন ও জনউদ্যোগ গাইবান্ধা এর আয়োজনে উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের আদমপুর মিশন সংলগ্ন বুজরুকবেড়া আদিবাসী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বাহা পরব বা বসন্ত উৎসব উদ্্যাপন করে সাঁওতালরা।

নাচে-গানে আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতিতে বাহা পরবের মাধ্যমে বরণ করেন ঋতুরাজ বসন্তকে। দিনভর ধর্মীয় পুজা-অর্চনা ও সাঁওতাল সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক সাঁওতাল নারী-পুরুষ-কিশোরী অংশ নেন। এ দিন সাঁওতাল-বাঙালিদের আগমনে মিলন মেলায় পরিণত হয় গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী। পরে স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত সাঁওতাল সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।

অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহেদ হাসান, জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব তারিক হোসেন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস- আরডিআরএস বাংলাদেশ এর কৃষি ও পরিবেশ ইউনিটের প্রধান মোস্তফা নূরুল ইসলাম রেজা, পরিবেশ আন্দোলন-গাইবান্ধার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, রিপোর্টাস ইউনিটির সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী মুসা, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু, মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলী রানী দেবী, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, সুচিত্রা মর্মু তৃষ্ণা, জাকব টুডু, থমাস হেমব্রম, মনির হোসেন সুইট প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন বাহা পরব উদ্্যাপন কমিটির আহবায়ক ডা. ফিলিমন বাস্কে।

সাঁওতালরা আমাদের এ’দেশেরই নাগরিক, তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য এ’দেশের সংস্কৃতিরই অংশ উল্লেখ করে আলোচকরা, সাঁওতালদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় ও সামজিক উদ্যোগ গ্রহণ, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদান ও কালচারাল একাডেমি স্থাপন করার দাবি জানান।

বাহা পরব উদযাপন কমিটি আহবায়ক ডা. ফিলিমন বাস্কে বলেন, প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। এই বাহা উৎসবের পুজা পার্বন করলে আমাদের সমাজ ও পরিবারের উন্নয়ন হবে। বাহা পুজা না করা পর্যন্ত সাঁওতাল নারীরা বাহা ফুল অর্থাৎ শাল ফুল ছিড়েও না মাথায়ও পরে না। ভবিষ্যতে যাতে এই ঐতিহ্যবাহী বাহা পরব হারিয়ে না যায়, সেজন্য নতুন প্রজন্মকে জানাতেই এই উৎসব আয়োজন।

উল্লেখ্য, আদিবাসী সাঁওতালদের অন্যতম একটি প্রধান পার্বণ হচ্ছে ‘বাহা উৎসব’ বা বাহা পরব। বাহা অর্থ ফুল। তাই বাংলায় বাহা পরবকে ‘ফুল উৎসব’ বলা হয়। মূলত: নববর্ষ হিসেবে ফাল্গুণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করে সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী-সাঁওতালরা। উত্তরাঞ্চলে সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ওঁড়াও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়ী, রাজওয়ারসীসহ মোট ৩৮টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এই বাহা উৎসব পালন করে থাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..