গরমে তৃষ্ণা মিটাচ্ছে কচি তালের শাঁস
ইফতেখার মোরশেদ রিমন বরগুনা জেলা ব্যুরো প্রধান:
বরগুনার বেতাগী পৌরশহরের কাঁচাবাজার এলাকায় তালের শাঁস বিক্রি করছেন নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি উপজেলার ফুলতলা গ্রামে। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদহে হাঁসফাঁস করা মানুষগুলো তৃষ্ণা মেটাতে ভিড় করছে তার কচি তালের দোকানে। আর নাসির ধারালো দা দিয়ে তালের শাঁস বের করে তাদের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। প্রতিটি বড় সাইজের তাল ২০ টাকা, মাঝারি ১৫ টাকা ও তার চেয়ে একটু ছোট ১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি।
তাল বিক্রেতা নাসির জানায়, প্রতিদিন তিনি ৩ থেকে ৪ শতাধিক তাল কেটে বিক্রি করেন। প্রতিটি তালের ভিতর দুই থেকে তিনটি শাঁস থাকে এবং প্রতিটি তাল গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব কচি তাল কিনে আনেন তিনি। তালের সংখ্যা ভেদে একটি গাছের দাম পড়ে ৫শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। গরম পড়লে তালের শাঁস অনেক বেশী বিক্রি হয়। প্রতি বছর তিনি এ মৌসুমে তালের শাঁস বিক্রি করেন।
বেতাগী পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড, খাস কাচারি মাঠ, কাঁচাবাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ভ্রাম্যমান তালের দোকান নিয়ে বসছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এক কুড়ি তালের শাসের মূল্য ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা আর এক কুড়ি আস্ত তাল ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মৌসুম এ ফল কেউ কিনে দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন আর কেউবা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
কচি তাল কিনতে আসা শাহ আলম খলিফা বলেন, তীব্র গরমের কারণে বাজারে কচি তালের চাহিদা অনেক বেশি। যেহেতু কচি ডাবের দাম অনেক বেশি তাই পিপাসা মিটাতে সাধারণ মানুষ কচি তালের শাঁসের দিকে বেশি ঝুঁকছে। তবে চাহিদা বেশি থাকার কারণে কচি তালও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির স্বপন জানান, একসময় উপজেলা ব্যাপি গ্রামে গ্রামে বড় বড় তাল গাছ ছিল। আগে রাস্তার পাশে তালের রস নিয়ে বসতো। সেটির এখন আর দেখা মেলে না। যেভাবে তালের গাছ কাটা হচ্ছে তাতে এখন তালের শাঁস খেতে পারলেও কিছুদিন পর এগুলো আর পাওয়া যাবে না।
তালের শাঁসের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, কচি তালের বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। গরমে শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে গেলে তা পুরন করার পাশাপাশি তালের শাঁস শরীরকে দ্রুত শীতল করে। তাছাড়া তালের শাঁস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী সুস্বাদু একটি ফল। খেজুরের গুড়ের মতো তালের রসও পুষ্টিকর।
দিন দিন তালগাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামঞ্চলের মানুষ তালগাছের গুরুত্ব না বুঝে তালগাছ কেটে ফেলছে। তবে এখন বজ্রপাত রোধে কৃষি অফিস ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ধারে ও খালের পাড়ে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে।