বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

ক্যান্সার চিকিৎসায় বৈষম্য বাড়ছে ফেব্রুয়ারী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৫২ বার পঠিত

ক্যান্সার চিকিৎসায় বৈষম্য বাড়ছে
ফেব্রুয়ারী

মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী
বিশেষ প্রতিবেদন

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি)। প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারী সারাবিশ্বে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।দিবসটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল নামক একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হয়। এটি পূর্বে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। এ সংস্থার সদর দফতর জেনেভায় অবস্থিত, যার ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় দু’হাজার সদস্য রয়েছে।দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এ কর্কট রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া এবং এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘বৈষম্য দূর করি, ক্যান্সার চিকিৎসা নিশ্চিত করি’।এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার উদ্যোগে ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব লায়ন সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব রেজাউল করিম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা শহীদ সহরোওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর এবিএম মাকসুদুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান
প্রফেসর তৌহিদ মোহাম্মদ সাইফুল হোসেন,, চটগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগ বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ প্রাক্তন অধ্যাপক প্রফেসর রাশেদা সামাদ,চমাশিহা ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর কামরুজ্জামান চৌধুরী।
এছাড়া অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, হাসপাতালে ট্রেজারার অধ্যক্ষ ডক্টর লায়ন মোঃ সানাউল্লাহ, জয়েন্ট ট্রেজারার লায়ন এস এম কুতুব উদ্দিন কার্যনির্বাহী সদস্য ডাক্তার ফজল করিম বাবুল, হারুন ইউসুফ ও এসএম জাফর, মা ও শিশু মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ এস এম মোস্তাক আহমেদ ,ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার অসীম কুমার বড়ুয়া, হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার মোহাম্মদ নুরুল হক, উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন, উপ-পরিচালক মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স ডাক্তার এ কে এম আশরাফুল করিম, ক্যান্সারল হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার শেফতুজ্জামান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামবাসীর উপকারার্থে ক্যান্সার হাসপাতালের নির্মাণের জন্য মা ও শিশু হাসপাতালকে জায়গা দেওয়ায় এতদঞ্চলের মানুষ স্বল্প স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে। ক্যান্সার দিবসে চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব লায়ন সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন ও জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব রেজাউল করিম আজাদ সহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ।
প্রফেসর এবিএম মাকসুদুল আলম বলেন, সকলের জন্য অ্যাপ্রুজেবল কোয়ালিটি পূর্ণ সার্ভিস সৃষ্টির করার মাধ্যমে বৈষম্য দূর করে ক্যান্সারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ক্যান্সার চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হচ্ছে রেডিওথেরাপি মেশিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি মেশিন দরকার। সে হিসাবে আমাদের ১৭ কোটি মানুষের জন্য ১৭০টি মেশিন থাকা দরকার। আর চিকিৎসাসেবা সহজ করতে প্রয়োজন ২০০টি মেশিন। তবে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে আছে মাত্র ২০টি মেশিন। এর অর্ধেকের বেশি আবার নষ্ট। বিএসএমএমইউতে একটি মেশিন আছে। সব সময় সচল থাকে না, মাঝেমধ্যে নষ্টও থাকছে।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের অভাবও আরেকটি বড় উদ্বেগের কারণ। দেশে মোট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তিন শর বেশি হবে না। তাঁদের পক্ষে এত বেশি রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিফাতুজজাহান জাহান বলেন, ওষুধের খরচ অনেক বেশি। তবে আগের চেয়ে কিছু কমেছে। আগে যেখানে ৩০ হাজার লাগত, সেখানে এখন ১০ হাজার লাগছে। তবে কাঁচামাল দেশে তৈরি করা গেলে আরো খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। রোগীর খরচ না কমানো গেলে চিকিৎসাসেবায় বৈষম্য হবে, এটা স্বাভাবিক। তবে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে এসে টাকার অভাবে কেউ চিকিৎসা সেবা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে। অত্যাধুনিক লিনিয়র এক্সেলেটর রেডিওথেরাপি মেশিন আনা হয়েছে। অল্প খরচে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা ভালো চিকিৎসা সেবা পাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৮ সালে ৯.৬ মিলিয়ন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। তাই ক্যান্সার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য বিশ্ব জুড়ে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়।বিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণে রয়েছে এই ক্যান্সারের নাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সচেতনতা, শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে বাংলাদেশে ক্যান্সারের মৃত্যুহার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা করা সহজ হয়। ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নির্ভর করে ক্যান্সার কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটির কাছাকাছি কোন অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করে, তার উপর।দেশে চিকিৎসাসেবায় সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী। এর প্রধান কারণগুলো হচ্ছে চিকিৎসাব্যবস্থা রাজধানীকেন্দ্রিক, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও লোকবলের অভাব, যন্ত্রপাতির সংকট এবং চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করাতে হয় বলে অবস্থাপন্ন ব্যক্তি যেভাবে ব্যয় মেটাতে পারে, অন্যরা সেভাবে পারে না।এই বৈষম্য দূর করতে জাতীয় ক্যান্সার তহবিল গঠনে গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।তাঁরা বলছেন, প্রান্তিক পর্যায়ে ক্যান্সারের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত, হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার চিকিৎসার উপযোগী দক্ষ লোকবল তৈরি বা নিয়োগ এবং হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করলে চিকিৎসাসেবা উন্নত ও বৈষম্য কমে আসবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চিকিৎসা ব্যয় নাগরিকদের নিজ পকেট থেকে দিতে হয়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। তাদের আয়ের বড় একটি অংশ এই স্বাস্থ্যসেবায় চলে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএআরসি) তথ্য মতে, ২০২২ সালে বিশ্বে নতুন করে দুই কোটি মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে।

মৃত্যু ৯৭ লাখ মানুষের। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য মতে, একই বছর বাংলাদেশে এক লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন মারা গেছে। দেশে ক্যান্সার রোগীদের নিবন্ধন না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, দেশে ১৫ থেকে ২০ লাখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। প্রতিবছর এই তালিকায় দুই লাখ রোগী যোগ হয়।ক্যান্সার চিকিৎসায় যত ব্যয়

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসায় গড়ে পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪০ টাকা পকেট থেকে খরচ করতে হয়। এই খরচ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৮১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধপত্র কিনতে। ক্যান্সারের প্রাথমিক স্তরে গড়ে চিকিৎসা খরচ তিন লাখ ৩১ হাজার ২৪৩ টাকা। দ্বিতীয় স্তরে গড় খরচ ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৫ টাকা।ক্যান্সারে মৃত্যুহার দ্বিগুণ হওয়ার শঙ্কা

তামাক ব্যবহার, অ্যালকোহল সেবন, স্থূলতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ২০৫০ সালের মধ্যে নতুন করে ৪.৮ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে কম আয়ের দেশে। দরিদ্র দেশগুলোতে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইএআরসি)।

সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ মিলিয়নে দাঁড়াতে পারে, যা ২০২২ সালের চেয়ে অন্তত ৭৭ শতাংশ বেশি।প্যালিয়েটিভ কেয়ার পায় ০.০১% রোগী, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ২০১৪ সালের একটি গবেষণায় এবং ২০২৩ সালে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশের ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার জার্নালে’ দেখা গেছে, দেশে বছরে ক্যান্সারের মতো নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত সাত লাখ মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবার প্রয়োজন। এই হিসাবের মধ্যে শিশু-কিশোর রয়েছে ৪০ হাজার

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..