কথিত বৌদ্ধ নেতার নেতৃত্বে বিতর্কিত “বৌদ্ধ পারিবারিক আইন” এর খাসড়া বাতিলের দাবীতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা
স্টাফ রিপোর্টারঃ কথিত বৌদ্ধ নেতার নেতৃত্বে বিতর্কিত “বৌদ্ধ পারিবারিক আইন” এর খাসড়া বাতিলের দাবীতে আজ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
আজ সকাল সাড়ে ৯ ঘটিকার সময় “বাংলাদেশ সম্মিলিত বৌদ্ধ” সমাজের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন সচেতন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেন উক্ত মানববন্ধনে।
তর্কিত বৌদ্ধ পারিবারিক আইন এর খসড়া বাতিল দাবী করে এডভোকেট সুজন বড়ূয়া বলেন, এই আইন টি একটি গাঁজাখুরি ও গোঁজামিল আইন। এই আইনে বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রধান গ্রন্থ ত্রিপিটক ও হাজার হাজার বছর ধরে বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি এবং প্রথাগত আইন কিছুই অনুসরণ করা হয়নি।
স্থপতি বিজয় তালুকদার বলেন, বিলুপ্ত প্রায় বৌদ্ধ জাতিকে সমূলে বিনাশ করার পায়তারা রুখতে হবে। গোঁজামিল আইনটি বাতিল করতে বাধ্য করতে হবে নইলে শুধু সারাদেশে নয় বরং সারাবিশ্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
স্থপতি সুনিল বড়ুয়া বলেন, এই আইন প্রনয়নে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কোন প্রকার পরামর্শ চান নি প্রস্তাবকারীরা। কাদের জন্য আইন? কে কি আইন চেয়েছিল? আর কারাই বা আইন প্রনয়নকারী দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় জানেনা। এটা তো হতে পারেনা। হাজার বছরের ঐতিহাসিক শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁচে থাকা বৌদ্ধ সমাজকে এই আইন দ্বারা নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। তা হতে দেয়া যায় না।
ডাঃ পরিতোষ বড়ুয়া বড়ুয়া বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ জাতি। আমাদের হাজার বছরের শান্তির ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক, আমাদের ধর্মীয় কৃষ্টি কালচার অনেক বেশি সুসংহত ও শক্তিশালী। তাই আমরা আমাদের ধর্মীয় প্রভাবে সারাবিশ্বে বিদ্যমান সংস্কৃতিতে সুখে শান্তিতে সর্বত্র বসবাস করছি। সেখানে কোন অন্যান্য সংস্কৃতির ধার করা আইন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়নি বা হবেও না। তাই আইন বাতিল চাই।
অর্পিতা বড়ুয়া বলেন, বৌদ্ধ পারিবারিক আইন নামের গোঁজামিল আইন দিয়ে সারাদেশের বৌদ্ধদেরকে সহিংস করে তুলতে চায়। নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও মামলা দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশে বৌদ্ধদের বাস্তুচ্যুত করতে চায়।
লায়ন সমীরন বড়ুয়া বলেন, যাতে করে বৌদ্ধ ধর্মীয় স্বত্বাকে উপেক্ষা করা হয়েছে আর ভিন্ন ধর্মীয় কৃষ্টি কালচারকে যুক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষক বিষু কুমার বড়ুয়া বলেন, এই আইন দেশে একবার প্রতিষ্ঠিত হলে দেশে আর বৌদ্ধ সমাজের হাজার বছরের শান্তির পরিবেশ ভূলুন্ঠিত হবে এবং দেশে বৌদ্ধদের অস্থিত্ব স্বল্পসময়ে বিলীন হয়ে যাবে।
বৌদ্ধ নেতা বিভূতিভূষণ বড়ুয়া বলেন, আমরা প্রস্তাবিত আইন সম্পর্কে কিছুই জানিনা, আর যে আইন তৈরি করা হয়েছে, সেই আইন বৌদ্ধ সমাজের ক্ষতি বৈ উপকারে আসবেনা তাই আমরা এই আইন চাই না।
ব্যাংকার রাজু বড়ুয়া বলেন, উক্ত প্রস্তাবিত ও বিতর্কিত আইনটি বাতিল করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করে বলেন, সরকার দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। আর এই দেশের বৌদ্ধদের জীবনাচরণকে দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে বৌদ্ধ সুরক্ষা আইন করতে পারেন।
তন্ময় বড়ুয়া বলেন, দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে অবহিত না করে বৌদ্ধ ধর্মীয় কিছু সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা গোপনে বৌদ্ধ পারিবারিক নামের গোঁজামিল আইন তৈরি করতে চায়। যা খুবই নিন্দনীয় ও ষড়যন্ত্রের সামিল। যার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
আশুতোষ বড়ুয়া বলেন, সমতলীয় ও পাহাড়ী বৌদ্ধদের বিভাজন করে বৌদ্ধ কৃষ্টি কালচারকে ভূলুন্ঠিত করে ভিন্ন ধর্মীয় চেতনায় উদ্ভদ্ধ হয়ে যে আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে সেই আইন দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে স্বল্প সময়ে বাস্তুহারা করবে।
পরিবেশবাদী সুজন বড়ূয়া বলেন, দেশে আমরা বৌদ্ধরা বৌদ্ধ সমাজে বিদ্যমান বৌদ্ধ প্রথাগত নিয়ম ও রীতিনীতি মেনে অন্যান্য ধর্মের চেয়ে অনেক শান্তিতে আছি। বিদ্যমান বৌদ্ধ প্রচলিত নিয়মে কোন সমাজে হানাহানি, অন্যান্য ধর্মের সমাজের চেয়ে বৌদ্ধ সমাজে মামলার সংখ্যাও নগন্য। তাই আমাদের নতুন কোন আইন প্রয়োজন নাই।
অনিন্দ্য বড়ুয়া বলেন, বিদ্যমান বৌদ্ধ ধর্মীয় আইনে দেশের তথা সারাবিশ্বে সন্তোষ প্রকাশ করছে। আর বৌদ্ধরা শান্তিপ্রিয় সম্প্রদায় হিসেবেই আমাদেরকে চিনে। এখন কিছু সম্প্রদায়ের এতে গাত্রদাহ হচ্ছে। আমাদেরকে আইনের ফাঁদে ফেলে সহিংস করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব তথাকথিত বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের দিয়ে আইন প্রস্তাব করে পাশ করে নিতে পারলে কেল্লা ফতেহ।
রোকেল বড়ুয়া বলেন, দেশে বিতর্কিত ও গোঁজামিল আইন দিয়ে শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ সমাজকে ধবংস করতে আসবেন না। সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান, নইলে এই দেশের মাটিতে মীরজাফর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পরকালে পাড়ি জমাতে হবে।
প্রকৌশলী সবুজ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, শুভ্রা বড়ুয়া, নির্মল কান্তি বড়ুয়া, রুপনা বড়ুয়া, রাজু বড়ুয়া, জনি বড়ুয়া, অর্পিতা বড়ুয়া, ইশা বড়ুয়া, শৈলি বড়ুয়া, সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও মহান ভিক্ষুসংঘ।