উপকূলে স্বস্তির সকাল! নির্ঘুম রাতের পালা শেষে বাঁধ নির্মাণ!
বি.সরকার, স্টাফ রিপোর্টার খুলনা।
উপকূলের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দু’দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পর খুলনা অঞ্চলের আবহাওয়া ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং উপকূলীয় এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করে। কয়রার মানুষ বাঁধ জন্য আতঙ্কে ছিল গত কদিন। সকাল বেলায় আতঙ্ক কাটিয়ে অনেকটা স্বস্তিতে বাড়িতে ফিরেছেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানরতরা।
এছাড়া ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ ভোর থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর দিকনির্দেশনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতা কাজ শুরু হয়। এসময় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ পরিদর্শনকালে উপস্থিত থেকে শ্রমিকদের সাথে কাজ ও দাড়িয়ে তদারকি করেন সংসদ সদস্য বাবু সহ উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকনুজ্জামান, স্থানীয় চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ।
কয়রা উপজেলা সদরের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে থাকা মনিরুল বলেন, ঘরের অবস্থা ভালো ছিল না। তাই রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। সারারাত জেগে বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম কখন ভেঙ্গে পানি আসে। সকালে একটু স্বস্তি পাই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে শুধু মুড়ি ও চানাচুর খেয়ে রাত কাটিয়েছি। আরেক ব্যক্তি ইমরান বলেন, বউ-বাচ্চা নিয়ে আসছিলাম। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। উপজেলা প্রশাসনের খাবার খেয়েছি, সরকারি জায়গায় নিরাপদে থাকতে পেরেছি।
এলাকাবাসীর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আতঙ্ক থেকে বড় আতঙ্কে ছিল বেড়িবাঁধ নিয়ে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে কয়রা উপকূলীয় জনপদ আবারো বিলীন হতো পানির নিচে। এলাকার অধিকাংশ বাঁধ সুরক্ষিত থাকলেও উত্তর বেদকাশী এলাকার হরিণখোলা বাঁধে হঠাৎ করে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। লোনাপানির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কৃষিজমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্বল বেড়ি বাঁধের কারণে ভয় এবং আতঙ্ক দুটোই সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মনে। এবারও দায়সারাভাবে বাঁধগুলো মেরামতের চেষ্টা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে কবে নাগাদ বাঁধগুলো মজবুত ভাবে তৈরি হবে সে বিষয়ে কোন উত্তর দিতে পারিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকর্মকর্তারা । কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত শুনে আমরা মানুষকে সচেতন করা ও আশ্রয় কেন্দ্রে আনার জন্য মাইকিং করি আল্লাহর রহমতে ঝড়ে উপজেলার কোথাও কোনো বড় ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে হরিণখোলা নামক স্থানে বাঁধে ভাঙ্গন লাগে, স্থানীয় এমপির দিক নির্দেশনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগীতায় পানি আটকানো হয়।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকুনুজ্জামান বলেন, উপজেলায় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বড় ধরণের ক্ষয় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি সকাল থেকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। উপজেলার ১১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৩ হাজার ও অন্যান্য স্থাপনায় আরও ৯ হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছিল। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দের দিয়ে শুকনা খাবার বিতরন ও নিয়মিত মনিটরিং করি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে এলাকায় থেকে প্রশাসন ও নেতাকর্মী নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খাদ্য বিরতন ও সবকিছু মনিটরিং করেছি। একটি পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দেয় তাৎক্ষনিক মেরামত করা হয়েছে সাথে সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে উক্ত স্থান দ্রুত ঝুঁকিমুক্ত করতে। তিনি বলেন, এসব বাধ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপের জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন।