আফগানিস্তানে ফের বোমা হামলার আহ্বান ট্রাম্পের
জসীম উদ্দিন ইতি
আফগানিস্তানে ফেলে আসা সব যুদ্ধসরঞ্জাম ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন সাবেক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তালেবান যদি এসব সরঞ্জাম ফিরিয়ে
দিতে অস্বীকার করে তবে আবারও আফগানিস্তানে বোমা হামলা চালাতে আহ্বান
জানিয়েছেনে রিপাবলিকান দলের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
সোমবার (৩০ আগস্ট) কাবুল থেকে সর্বশেষ মার্কিন সেনা ফিরিয়ে আনার পর
সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ইমেইল বার্তায় ট্রাম্প এমন আহ্বান
জানিয়েছেন।
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইতিহাসে এমন খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে
কোনো সেনা প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেনি। যা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার
প্রশাসনের চরম অযোগ্যতা-ব্যর্থতা।
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সব যুদ্ধসরঞ্জাম ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য
তালেবানকে বলা হোক। পাশাপাশি যুদ্ধসরঞ্জামের সাড়ে আট হাজার কোটি মার্কিন
ডলারের প্রতিটি অর্থ যেন যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তা না হলে
যুক্তরাষ্ট্রের আবার পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে আফগানিস্তানে যাওয়া উচিত
এবং বোমা বর্ষণ করা উচিত।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রত্যাহার সমাপ্ত হয়েছে।
কাবুল বিমানবন্দর থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে
সোমবার (৩০ আগস্ট) সর্বশেষ মার্কিন সেনাটিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও
তালেবান শাসন থেকে বাঁচতে এখনো হাজার হাজার আফগান নাগরিক দেশ ছাড়তে
মরিয়া। ইতিমধ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের হামলায় ১৩ আমেরিকান সেনাকে প্রাণ
দিতে হয়েছে।
সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পেন্টাগন বলেছে, ২০০১ সালের ১১
সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পর গত দুদশকের মধ্যে এই প্রথম কোনো মার্কিন
সেনার উপস্থিতি নেই আফগানিস্তানে। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের
সমাপ্তি ঘিরে তৈরি হওয়া আবেগঘন পরিবেশকে ‘হৃদয় বিদারক’ বলে আখ্যায়িত
করেছেন মার্কিন মেরিন জেনারেল ফ্রাংক ম্যাকাঞ্জি। এর আগে আমেরিকান নাগরিক
ও ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের সরাতে অক্লান্ত ও বিপজ্জনক পরিশ্রম করতে হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের।
মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল ম্যাকাঞ্জি বলেন, এই
প্রত্যাহারের সঙ্গে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা জড়িত। আমরা সবাইকে সরিয়ে আনতে
পারিনি। যদিও তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। আফগানিস্তানে মার্কিন
শীর্ষ কূটনীতিক রস উইলসন কাবুল বিমানবন্দরের সর্বশেষ সি-১৭ সামরিক পরিবহন
ফ্লাইটে ওঠেন। তখন রাত এগারোটা ৫৯ মিনিট। তার সঙ্গে মার্কিন সামরিক
বাহিনীর ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের কমান্ডিং জেনারেলরাও ছিলেন।
গত ১৪ আগস্ট থেকে কাবুল থেকে এক লাখ ২২ হাজার মানুষকে প্রত্যাহার করে
নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়, ২০০১ সালে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার
নেপথ্যে থাকা আল-কায়েদা জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল তালেবান। দীর্ঘ দুদশকের
লড়াই শেষে তারা ফের আরও শক্তিশালীভাবে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হাতে
পেয়েছে।
ম্যাকাঞ্জি বলেন, যদি আমরা আরও ১০টি দিন বেশি থাকতাম। তবুও সবাইকে সেখান
থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে পারতাম না। মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহারকালে তারা
৭০টি বিমান, কয়েক ডজন সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে দিয়েছে। এছাড়া চলে আসার আগে
আইএসের রকেট হামলা থেকে বিমানবন্দরকে রক্ষা করা আকাশ প্রতিরক্ষা
ব্যবস্থাও অকার্যকর করে দিয়ে এসেছে।
তালেবান যে এভাবে এত দ্রুত বিজয় লাভ করবে, তা নিয়ে পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ
হয়েছে ওয়াশিংটন ও ন্যাটো মিত্ররা। কাবুল পতনের পরে মার্কিন বাহিনীকে
তাড়াহুড়ো করে দেশটি ছেড়ে আসতে হয়েছে। এতে আফগান যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীকে
সহায়তা করা কয়েক হাজার আফগানকে ঝুঁকির মুখে ফেলে এসেছে তারা। বিপজ্জনক
অবস্থায় থাকা এসব আফগান নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে
লোকজনকে জরুরিভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ করা হয়েছে। তালেবানের সঙ্গে
পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুক্তি অনুসারে সেনাপ্রত্যাহারের দায়িত্ব
পড়েছিল বাইডেনের ঘাড়ে। কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই সেনাপ্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন তিনি। সদ্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া বাইডেনের সিদ্ধান্তে বড়
ধরনের সংকট দেখা দিয়েছিল। এতে আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোতে স্থায়ী
প্রতিষ্ঠান গড়তে পশ্চিমা গণতন্ত্রের সক্ষমতা নিয়ে সুদূরপ্রসারী প্রশ্ন
তৈরি হয়েছে। এছাড়া তাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়েও এক ধরনের সন্দেহ গড়ে
উঠেছে।
আফগানিস্তানে তালেবানের দ্রুত ক্ষমতা গ্রহণে সঙ্গে ১৯৭৫ সালে উত্তর
ভিয়েতনামিজদের সাইগন দখলের তুলনা টানা হয়েছে। এ ঘটনা ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ
নেওয়া মার্কিন যোদ্ধাদের একটি প্রজন্মকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধের
শেষ দিনটি দুঃখজনকভাবে ইতি ঘটেছে। মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফ্লাইট
পরিচালনায় নিজ সেনাদের তারিফ করে এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, এটি ছিল অসম
সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব ও সংকল্প। এর মধ্যদিয়ে আফগানিস্তানে আমাদের ২০
বছরের উপস্থিতির অবসান ঘটেছে।
গেল দুদশকের যুদ্ধে দুই হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে নিহত
হয়েছেন। যার মধ্যে গত সপ্তাহে কাবুল বিমানবন্দরে আইএসকেপির আত্মঘাতী
হামলায় নিহত ১৩ মার্কিন সেনাও রয়েছেন। এসব সেনারা ২০০১ সালের ১১
সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার সময় নবজাতক শিশু ছিলেন। রোববার মার্কিন
ড্রোন হামলায় একটি পরিবারের ছয়টি শিশুসহ ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত এক
ব্যক্তির ভাই বলেন, আমরা কোনো আইএসের সদস্য ছিলাম না। একটি বেসামরিক
বাড়িতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্র যখন লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনছিলেন, তখন তালেবান তাদের
সহায়তা করেছে বলে দাবি করেন ম্যাকাঞ্জি। এখানে দুপক্ষের একটি কাকতালীয়
মিল ছিল: তালেবান চেয়েছে মার্কিন বাহিনী আফগান ছেড়ে চলে যাক। আর আমেরিকাও
যত দ্রুত সম্ভব আফগান ছাড়তে ইচ্ছুক ছিল।
ম্যাকাঞ্জি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আইএসকেপিকে মোকাবিলায় তালেবানকে কঠিন
পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। ভবিষ্যতে তালেবানের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে
কোনো পূর্বধারণা দিতে তিনি অস্বীকার জানিয়েছেন। যদিও গত সপ্তাহের বোমা
হামলায় দায়ী আইএস যোদ্ধাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই জেনারেল বলেন, তালেবান অনেক লোককে কারাগার থেকে ছেড়ে
দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এর পরিণতিও তাদের ভোগ করতে হবে।