রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

অধিক লাভজনক হওয়ায় রাজশাহীতে দিন দিন বাড়ছে পান চাষ।

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১
  • ১৯৯ বার পঠিত

 

অধিক লাভজনক হওয়ায় রাজশাহীতে দিন দিন বাড়ছে পান চাষ।

তরিকুল ইসলাম তারেক রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি ঃ

অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হওয়ায় রাজশাহীতে দিন দিন বাড়ছে পান চাষ। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৪৪৯৯.২৩ হেক্টর জমিতে (পানবরজ) ৭৬১৫১.৮২৫ মেট্রিকটন পানের উৎপাদন হয়েছে। সেই হিসেবে এবার রাজশাহীতে মোট ১৫৬১ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকার পান উৎপাদন তথা বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৪৩১১ হেক্টর জমিতে ৭২৩৩০.৩৪ মেট্রিকটন পান উৎপাদন হয়েছিল।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, ‘রাজশাহীর স্থানীয় বাজারে পান বিক্রি হয় পোয়ার (৩২ বিড়ায় এক পোয়া) হিসেবে। তবে আমরা কেজিতে পানের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি বের করেছি। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি- একটি পানের গড় ওজন ৫ গ্রাম। আর এক পোয়া বা ৩২ বিড়া পানের ওজন ১০ কেজি। আর ১০ কেজি পানের দাম গড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সেই হিসেবে ১ কেজি পানের দাম ২৫০ টাকা। আর ১০০০ কেজি বা ১ মেট্রিক টন পানের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’ এর সূত্র ধরে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, চলতি বছরে ৭৬১৫১.৮২৫ মেট্রিকটন পানের উৎপাদন হয়েছে। এক মেট্রিকটন পানের দাম যদি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হয় তাহলে চলতি বছরে উৎপাদিত পানের দাম হয় ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রাজশাহীর মাটি ও জলবায়ু পান চাষে বেশ উপযোগী হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। স্থানীয় বাজারে পানের চাহিদাও বাড়ছে ব্যাপক। এতে অর্থনৈতিকভাবে দেশ তথা রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটছে। রাজশাহীর পান বিদেশেও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হচ্ছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরে ৭২ হাজার ৭৬৪ জন কৃষক রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পান চাষ করে। বিভিন্ন ধরনের পানের মধ্যে রাজশাহীতে মিষ্টি পানের উৎপাদন বেশি। এছাড়াও জেলার পুঠিয়া উপজেলায় এবার দুধস্বর ও সাচি পানের চাষ হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে পবা উপজেলায় ২ হাজার ৭৫০ জন কৃষক ২৩০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করে ৩ হাজার ৪৫০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৫ মেট্রিকটন) পান উৎপাদন করেছে। এছাড়া তানোর উপজেলায় ৬ জন কৃষক ০.৫৩ হেক্টর জমিতে ৬.৬২৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.৫ মেট্রিকটন); মোহনপুর উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৯০ জন কৃষক ১ হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৯১২ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৬ মেট্রিকটন); বাগমারা উপজেলায় ২৩ হাজার কৃষক ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে ২৮ হাজার ৮০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৮ মেট্রিকটন); দুর্গাপুর উপজেলায় ২৭ হাজার ৮০০ কৃষক ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে ২৩ হাজার ৯৭০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৭ মেট্রিকটন); পুঠিয়া উপজেলায় ২ হাজার ৩০০ কৃষক ১১৫ হেক্টর জমিতে দুধস্বর ও সাচি পানের চাষ করে ১ হাজার ৭২৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৫ মেট্রিকটন); গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩ জন কৃষক ০.২০ হেক্টর জমিতে ১.৭ মেট্রিকটন (গড় ফলন ৮.৫ মেট্রিকটন) এবং চারঘাট উপজেলায় ১৫ জন কৃষক ১.৫০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করে ৬.৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৩ মেট্রিকটন) পান উৎপাদন করেছে।

গত সোমবার (০৯ আগস্ট) সরেজমিন জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি পান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে- বড়-ছোট আকৃতি অনুযায়ী প্রতি পোয়া (৩২ বিড়া) পানের দাম দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার মধ্যে ছোট পান বিক্রি হচ্ছে ১৫’শ টাকা, মাঝারি ২৫’শ টাকা ৩ হাজার টাকা এবং মোটা বা বড় পান সাড়ে ৩ হাজার টাকা পোয়া দরে।

উপজেলার মৌগাছি গ্রামের পানচাষি আলী হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘মড়ক না লাগলে অন্যান্য কৃষি ফসলের তুলনায় পান চাষে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। পানকে আমরা সোনার পাতার সঙ্গে তুলনা করি। ভাল পান হলে ১০ কাঠার বরজ থেকে বছরে পান বিক্রি করে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এবার আমি ৩০ কাঠা জমিতে পানবরজ করে সবমিলিয়ে ১৬ লাখ টাকা আয় করেছি।’

জেলার বাঘমারা উপজেলার পান ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘স্থানীয় বিভিন্ন পান বরজ থেকে পান ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় আমি পান বিক্রি করি। এতে মাসে আমার প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে ভারত থেকে এলসি’র মাধ্যমে পান দেশে না আসলে দেশের বাজারে পানের চাহিদা আরও ব্যাপক থাকতো। তারপরও রাজশাহীর এই মিষ্টি পান সারাদেশ এমনকি বিদেশেও সমাদৃত। অনেক সময় ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা বিদেশেও পান রপ্তানি করে থাকি।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘পান শুধু যে মানুষ খায় তা কিন্তু নয়। পানে রয়েছে ঔষধি গুণ। যার কারণে ঔষধ শিল্পেও পানের ব্যবহার ব্যাপক। এজন্যও পানের চাহিদা প্রচুর। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষে কৃষকরা অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতিবছর রাজশাহীতে পানের চাষ তথা পানবরজ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ২১৯৫.৩৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছিল। তার পরের বছর (২০১৭-১৮ অর্থবছর) ২৫৮৩.৩৪ হেক্টর জমিতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২৮৮০.৭২ হেক্টর জমিতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪৩১১ হেক্টর জমিতে এবং চলতি অর্থবছর তথা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৪৪৯৯.২৩ হেক্টর জমির পানবরজে পান চাষ হয়েছে।’

উপ-পরিচালক বলেন, ‘পান চাষিদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে পান চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে এর উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর দেশের বাইরে রাজশাহীর পান রপ্তানি বৃদ্ধির আর টেকসই উদ্যোগ নেয়া হলে রাজশাহীর এই পান হতে পারে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য একটি বিশাল খাত।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..